পাতা:দৃষ্টিপ্রদীপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কঙ্কাবতী, হাতেম। তাই, হিতোপদেশের গল্প, আমার জন্যে একখানা ভূগোল-পরিচয়’ বলে বই আর একখানা ঠাকুরদাদার ঝুলি’ ৷ আমি গল্পের বই পড়তে তত ভালবাসিনে, দু-তিনটে গল্প পড়ে আমার বইখানা আমি সীতাকে দিয়ে দিয়েছিলাম। আমার ভাল লাগে মীন্ডগুস্টের কথা পড়তে। পৰ্ব্বতে যীশুর উপদেশ, সীশুর পুনরুখাৰু অপব্যয়ী পুত্রের প্রত্যাবৰ্ত্তন। এ সব আমার বেশ লাগে। এখানে ও সব বই পাওয়া যায় না। ব’লে পড়িনে। ধীশুর কথা এখানে কেউ বলেও না। একখানা খুস্টের রঙীন ছবি আমার কাছে আছে-মিস নর্টন দিয়েছিল-সেখানা আমার বড প্রিয়। মাঝে মাঝে वांद्र क'द्ध ¢श्थि । হিন্দু দেবতার কোন মূৰ্ত্তি আমি দেখিনি, জ্যাঠামশায়ের বাড়িতে যা পুজো কবেন, তা গোলমত পাথরের নুড়ি। এ-গ্রামে দুর্গাপূজা হয় না, ছবিতে দুর্গামূৰ্ত্তি দেখেছি, ভাল বুঝতে পারিনে, কিন্তু একটা ব্যাপার হয়েছে মধ্যে। চৌধুরীপাড়ায় বড় পুকুরের ধারেব পাকুড়গাছের তলায় কালো পাথরের একটা দেবমূত্তি গাছের গুড়িতে ঠেসানো আছে- আমি একদিন দুপুরে পাকুড়তলা দিয়ে যাচ্ছি, বাবা তখন বেঁচে আছেন। কিন্তু তঁর খুব অসুখ-ওই সময় মুক্তিটা আমি প্ৰথম দেখি-জায়গাটা নির্জন, পাকুড়গাছের ডালপালার পিছনে অনেকখানি নীল আকাশ, মেঘের একটা পাহাড দেখাচ্ছে ঠিক যেন বরফে মোড কাঞ্চনজঙ্ঘা-একটা হাত ভাঙা যদিও কিন্তু কি সুন্দর যে মুখ মূৰ্ত্তিটার, কি অপূৰ্ব্ব গড়নআমার হঠাৎ মনে হ’ল ওই পাথরের মৃত্তির পবিত্র মুখের সঙ্গে ক্রুশবিদ্ধ যীশুখুস্টের মুখের মিল আছে-কেউ ছিল না। তাই দেখেনি-আমার চোখে জল এল, আমি একদৃষ্টিতে মূৰ্ত্তিটােব মুখের দিকে চেয়েই আছি-ভাবলাম জ্যাঠামশায়রা পাথরের নুড়ি পূজো করে কেন, এমন সুন্দর মৃত্তির দেবতা কেন নিয়ে গিয়ে পূজো করে না ? তার পরে শুনেছি ঐ দীঘি খুড়বার সময়ে আজ প্ৰায় পঁচিশ বছর আগে মৃত্তিটা হাতভাঙা অবস্থাতেই মাটির তলায় পাওয়া যায়। সীতাকে নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছিলাম। একবার-একবার সীতা, জবা, আকন্দ, ঝুমকো ফুলের একছড়া মালা গেথে মুক্তির গলায় পরিয়ে দিয়েছিল। অমন সুন্দর দেবতাকে আজ পচিশ বছর অনাদ t; গ্রামের বাইরের পুকুরপাড়ে আমন করে কেন যে ফেলে দিয়েছে এরা ! একবার একখানা বই পড়লাম-বইখানার নাম চৈতন্যচরিতামৃত । এক জায়গায় একটি কথা প’ড়ে আমার ভারি আনন্দ হ’ল। চৈতন্যদেব ছেলেবেলায় একবার আঁস্তাকুড়ে এটাে হাঁড়িকুড়ি যেখানে ফেলে, সেখানে গিয়েছিলেন ব'লে তীর মা শচীদেবী। খুব বকেন। চৈতন্যদেৰ বললেন-মা পৃথিবীর সর্বত্রই ঈশ্বর আছেন, এই আঁস্তাকুড়েও আছেন। ইক্স যেখানে আছেন, সে-জায়গা অপবিত্র হবে কি ক’রে ? ভাবলাম জ্যাঠাইমার বিরুদ্ধে চমৎকার যুক্তি পেয়েছি ওঁদের ধর্মের বইয়ে, চৈতন্যদে t