পাতা:দৃষ্টিপ্রদীপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আয় দেখেনি ? ওপারে ব্যারাকপুরের সাদা বাড়িগুলো যেন সবুজের সমুদ্রে ডুবে আছে। ঠিক যেন চা-ঝোপের আড়ালে ম্যানেজার সাহেবের কুঠী-লাল টালির ছাদ থাকলেই একেবারে চা-বাগান। ওই দিকে চেয়েই তো রোজ বিকেলে আমার মনে হয় বল্যের চা-বাগানের সেই দিনগুলো । বাড়ি ফিরে গেলাম সন্ধ্যার পরে। চাকরকে ডেকে বললাম, লুলু আলো দিয়ে যা। এমন সময়ে ভাবেশ এল। ভবেশ সেকেণ্ড ইয়ারে পড়ে, খুব বুদ্ধিমান ছেলে, স্কলারশিপ নিয়ে পাস করেচে-প্ৰথম দিনেই কলেজে এর সঙ্গে আলাপ হয়। ভবেশের দৈনন্দিন কাজ-রোজ এসে আমার কাছে খৃস্টান ধম্মের নিন্দ করা। আমাবে ও খৃস্টান ধন্মের কবল থেকে উদ্ধার ক’রে নাকি হিন্দু করবেই। আজও সে আরম্ভ করলে বাইবেলটা নিতান্ত বাজে, আজগুবী গল্প ৷ খৃস্টান ইউরোপ এই সেদিনও রক্তে সার দুনিয়া ভাসিয়ে দিলে গ্রেট ওয়ারে। কিসে তুমি ভুলেচ ? রোজ যাও পিকারিং সাহেবে। কাছে ধন্মের উপদেশ নিতে । ওরা তো তোমাকে খৃস্টান করতে পারলে বঁাচে তা ছাড়া আজ হিন্দুদের বলবৃদ্ধি করা আমাদের সবার কৰ্ত্তব্য-- এটা কি তোমার মনে छ्ग्न न ? * আমি বললাম-তুমি ভুল বুঝেচ ভবেশ, তোমাকে এক দিনও বোঝাতে পারলাম ন ষে আমি খৃস্টান নই ; খৃস্টান ধৰ্ম্ম কি জিনিস আমি জানিনে-জানবার কৌতুহল হয় তা পিকারিং সাহেবের কাছে জানতে চাই। আমি যীশুখুস্টের ভক্ত, তঁকে আমি মহাপুরুষ বলে মনে করি । তঁর কথা আমার শুনতে ভাল লাগে । তঁর জীবন আমাকে মুগ্ধ করে । এতে দোষ কিসের আমি তো বুঝি নে। -ও বটে। বুদ্ধ, চৈতন্য, কৃষ্ণ, রামকৃষ্ণ, এরা সব ভেসে গেলেন-ৰীশুখুণ্ট হ’ল তোমাৰ দেবতা ! এরা কিসে ছোট তোমার যীশুর কাছে জিজ্ঞেস করি ? -কে বলেছে তারা ছোট ? ছোট কি বড় সে কথা তো উঠচে না। এখানে ? আমি তাদের কথা বেশী জানি নে। যতটুকু জানি তাতে, তাদের শ্রদ্ধা করি। কিন্তু এও তা হয় কেউ একজনকে বেশি ভালবাসে আর একজনকে কম ভালবাসে ? --তুমি যতই বোঝাও জিতেন, আমার ও ভাল লাগে না । দেশের মাটির সঙ্গে যোগ নেই ওর।” তোমার মত চমৎকার ছেলে যে কেন বিপথে পা দিলে ভেবে ঠিক করতে পারিনে তোমার লজ্জা করে না একথা বলতে যে, রামকৃষ্ণ, বুদ্ধ, চৈতন্তের কথা কিছু জান না, তাদে কথা জানতে আগ্রহও দেখাও না, অথচ রোজ যাও বীতশ্বস্টের বিষয় শুনতে ? একশোবা বলবো তুমি বিপথে পা দিয়ে দাঁড়িয়েচ। কই, একদিন গীতা পড়েচ ? অথচ গসপেল পড়তে ዓ•