পাতা:দৃষ্টিপ্রদীপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লেখাপড়া করুন। কেন ও-রকম করেন ? আর বাড়ির মধ্যে আসেন না কেন ? ওতে আমার মনে ভারি কষ্ট হয়। যেমন আসতেন তেমনি আসবেন বলুন ? আমায় ভাবনার মধ্যে ফেলবেন না ও রকম । আমার শরীরে যেন নতুন ধরনের অনুভূতির বিদ্যুৎ খেলে গেল। সেখানে আর দাড়াতে পারলাম না-মুখে ঘা, এল, একটা জবাব দিয়ে নীচে নেমে এলাম। সারারাত আর ঘুমূতে পারিনে। আমার জন্যে একজন ভাবে এ চিন্তার বাস্তবতা আমার জীবনে একেবারে নতুন। নতুন নেশার মত এ অনুভূতি আমার সারা দেহমান অভিভূত ক’রে তুললে। কি অপূর্ব ধরনের আনন্দ-বেদনায় মাখানো দিন, সপ্তাহ, পক্ষ, মাস! দিনরাতে সব সময়ই আমার ওই এক চিন্তা। নির্জনে কাটাই, কিছু ভাল লাগে না, অথচ র্যার চিন্তা শয়নেস্বপনে সর্বদাই করি, পাছে তার সামনে পড়ি এই ভয়ে সতর্ক হয়ে চলাফেরা করি। লেখাপড়া, খাওয়া ঘুম সব গেল। বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি ছোটবৌঠাকরুনের হ’ল অসুখ । অসুখ ক্ৰমে বাড়াবাড়ি ধরনের হ’ল । চাতরা থেকে যদু ডাক্তার দেখতে এল। তঁর বাপের বাড়ি থেকে লোকজন এসে পড়ল-বাড়িম্বদ্ধ লোকের মুখে উদ্বেগের চিহ্ন। আমি ডাক্তার ডাকা, ওষুধ আনা এ-সব করি বাড়ির ছেলেদের সঙ্গে, কিন্তু একদিনও রোগীর ঘরে যেতে পারলাম নাকিছুতেই না। একদিন ঘরের দোরের কাছে গিয়ে দাড়িয়েছিলাম-কিন্তু চৌকাঠের ওপারে যাইনি। ক্ৰমে তিনি সেরে উঠলেন। একদিন আমার ‘চয়নিকা-খানা তিনি চেয়ে পাঠালেনদিন-দুই পরে কালো বই ফিরিয়ে দিয়ে গেল। চার-পাঁচ দিন পরে “চয়নিক’-খানা কি জন্যে খুলতে গিয়েচি, তার মধ্যে একখানা চিঠি, ছোটবৌঠাকরুনের হাতে লেখা। নাম নেই। কারুর । লেখা আছে।” *আমার অসুখের সময় সবাই এল, আপনি এলেন না কেন ? আমি কত আশা করেছিলাম। যে আপনি দেখতে আসবেন, জানেন তা ? আমার মরে যাওয়াই ভাল। কেন ষে আবার সেরে উঠলাম। অনুখ থেকে উঠে মন ও শরীর ভেঙে গেছে। কালোর মুখে শুনেচি, আপনি ঘরে টাঙিয়ে রেখেচেন ধীশুথুস্টের ছবি, তিনি হিন্দুৱা দেবতা নন-কিন্তু আপনি যাকে ভক্তি করেন--আমি এটাকে অবহেলা করতে পারিনে। আমার জন্যে তঁর কাছে প্রার্থনা করবেন। আর-একটা কথা-- একটিবার দেখতে কি আসবেন না ?” ধীশু খৃস্টের ছবির দিকে চাইলাম। সম্প্রতি একখানা বুদ্ধের ছবি, আর একখানা চৈতন্তের ছবিও এনে টাঙিয়েছিলাম। রোগশীর্ণ পত্ৰলেখিকার করুণ আকুতি ওদের চরণে পৌছে ঘেৰারি ভাৱ আমার ওপর পড়েচে । কিন্তু আমি কি পারব ? অনুকম্পায় মমতায় আমার মন তখন