পাতা:দৃষ্টিপ্রদীপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এ-রকম যখন হয়, তখন আমার শরীর যেন আমার নিজের থাকে না-নয়ত আমার সাধারণ অবস্থা থাকলে জিজ্ঞেস করতুম অনেক কথাই তাকে। একটু পরে খেয়া নৌকো এল --অনিচ্ছার সঙ্গে ঘাট ছেড়ে নৌকোতে উঠলাম। জায়গাটা পবিত্র প্রভাবে ভরা-এমন একটা প্রভাব, যা সে-দিন বরানগরের বাগান-বাড়ির সেই সাধুর কাছে গিয়ে অনুভব করিনি। দাদা আমায় দেখে খুব খুশী হ’ল । ওর চেহারা বড় খারাপ হয়ে গিয়েছে, ছেলেবেলােকাৱ দুধে-আলতা রঙের সেই সুশ্ৰী বালককে দাদার মধ্যে আর চিনে নেওয়া যায় না। একে লেখাপড়া শিখলে না, তার ওপরে এই সব পাড়াগায়ে চাকরি ক’রে বেড়ায়-চেহারায়, বেশভুযায়, কথাবাৰ্ত্তায় দাদা হয়ে গিয়েচে যেন কেমন। তেমনি ধরনের লোকের সমাজে সর্বদা 辽研C卒〔有目 ৱাত তখন প্ৰায় নটা, দাদা ফিরে এসে ব্লাল্লা চড়ালে । কি বিশ্ৰী জায়গাতেই থাকে। বাতাসার কারখানাটা একটা প্ৰকাণ্ড লম্বা চালাঘর-ছ-সাতটা বড় বড় উনুনে দিনরাত গানগনে আগুন-বড় বড় কড়ায় গুড়ের রস আর চিনির রস তৈরি হচ্ছে । এই কারখানায় অতি আগুনের তাতে থাকা কি দাদার অভ্যোস আছে কোনকালে ! দাদা নিজেই রান্না চড়ালে। আমায় বললে-খিচুড়ি খাবি জিতু ? বেশ ভাল মূগের ডাল আছে-ভীড়ে দেখি খি আছে বােধ হয় একটু দাদার বাসা ছোট একখানা চালাঘর । মেঝের ওপর শোয়, বিছানা পাতাই থাকে, কোনকালে তোলা হয় না, তবে খুব ময়লা নয়—আমরা ক' ভাইবোন ময়লা জিনিসপত্র মোটেই ব্যবহার করতে পারি নে, ছেলেবেলা থেকেই অভ্যোস। বিছানার ওপরকার কুলুঙ্গিতে খবরের কাগজ পাতা, একখানা ভাঙা পারা বার-হওয়া আশি, আর একখানা শিঙের চিরুনি । দাদা ছিল আমাদের মধ্যে সব চেয়ে ছেলেমানুষ, সব চেয়ে আনাডি, তাকে এখন নিজে রান্না ক’রে খেতে হচ্ছে! অথচ কি-ই বা জানে ও সংসারের, কি কাজই বা পারে ? রায়া চড়িয়ে দাদা বললে-ভাল কথা, দাড়া জিতু, তোর জন্যে একখানা ইংৱিজি বই রেখে দিইচি-বের করে দিই টিনের ছোট তোরঙ্গ খুলে একখানা মোটা ইংরিজি বই আমার হাতে দিয়ে বললে-এখানে সাতুবাবু কণ্টকটর আসে বাতাসা নিতে, সে ফেলে গিয়েছিল আর ফিরে আসেনি। আমি তুলে রেখে দিইচি, ভাবলাম জিতু পড়বে পাতা উল্টে দেখি একটা বিলিতি স্টীল কোম্পানীর মূল্যতালিকা-খুব চমৎকার পাতা, চমৎকার ছাপা, বাড়িঘর, য়েলের পুল, কড়িবারগার ছবিতে ভতি । দাদার ওপরে দুঃখ হ’ল, বেচারি এ সব পড়তে পারে না, বুঝতেও পারে না-ভেবেচে কি অপূৰ্ব বই-ই না জানি। مهمسetitioriهسiffe