পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

 নবাবের ইচ্ছানুসারে, বিবাহের দুই সপ্তাহ পরেই আনার উন্নিসা পিতৃভবন ত্যাগ করিয়া তাহার স্বামীর প্রাসাদতুল্য, বহুমূল্য সজ্জাপূর্ণ বিচিত্র ভবনে আসিয়াছে। ইতিপূর্ব্বে এক দিন এই বাড়ীতেই সে আমন্ত্রিতা রূপে নবাব সুজাখাঁর নিকট হইতে সেই বহুমূল্য রত্নহার লাভ করিয়াছিল। সুতরাং সে দিন সে যে গৃহের অতিথি ছিল, আজ সে ঘটনাচক্র আবর্ত্তনে তাহার একাধিশ্বরী।

 আনার বড়ই তীক্ষ্ণ বুদ্ধিশালিনী। কিশোর অতিক্রম করিয়া সে যৌবন সীমায় পদার্পণ করিয়াছে। বর্ষার ভরা নদী যেন কূলে কূলে পুরিয়া উঠিয়াছে। ঢলঢল লাবণ্য, আর ওষ্ঠাধরে মধুর হাসি, মধুর অপাঙ্গে উজ্জল কটাক্ষ, হৃদয়ে স্বামীর প্রতি অনুরাগ। ভাগ্যের নূতন পরিবর্ত্তনে সে এখন এক প্রাসাদ তুল্য অট্টালিকার অভিষিক্ত রাজরাণী।

 স্পর্শমণির স্পর্শে, লৌহও সুবর্ণ হইয়া থাকে। আনার উন্নিসার আগমনে নবাব সুজা খাঁর প্রাসাদ তুল্য অট্টালিকা যেন সুখ সৌভাগ্যে উজ্জ্বলিত হইয়া উঠিল। তাহার চারিদিকে একটা নূতন শ্রী সম্পদ ফুটিয়া উঠিল।

 যেখানে যেটি রাখিলে সুন্দর দেখায়, যেটি করিলে ভাল হয়, আনারউন্নিসা সেইভাবেই তাহার নিজের ও স্বামীর ব্যবহৃত কক্ষগুলি সাজাইল। আগে যে সমস্ত কক্ষের প্রত্যেক সজ্জায়, রুচির অভাব আর একটা বিশৃঙ্খল ভাব দেখা যাইত, তাহা যেন শৃঙ্খলার মোহকরী স্পর্শে অতি সুন্দর অবস্থায় দাঁড়াইল।

৯৮