পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

 স্বভাবতঃই আনারউন্নিসা বড়ই অভিমানিনী। অনেক সময় রাগিলে তাহার ধৈর্য্য থাকিত না। মাতৃহীনা কন্যা বলিয়া তাহার পিতা তাহাকে যথেষ্ট প্রশ্রয় দিয়া মানুষ করিয়াছিলেন। কাজেই সে অতিরিক্ত মাত্রায় অভিমানিনী হইয়া পড়িয়াছিল।

 স্ত্রীলোকে সব জিনিষের ভাগ ছাড়িয়া দিতে পারে, কিন্তু স্বামীর ভালবাসার অংশ সে কাহাকেও দিতে প্রস্তুত নহে। সুতরাং আনার উন্নিসার প্রাণে, সন্দেহের যে ধূমায়িত অগ্নি এত দিন ধরিয়া যে শক্তি সঞ্চয় করিতেছিল—সে দিনের ঘটনায় সহসা যেন তাহা প্রবল গর্জ্জনে জ্বলিয়া উঠিল। —

 কে এই বাহারবানু! এক কলঙ্কিতা, ঘৃণিতা স্বৈরিণি সে—তাহার এত স্পর্দ্ধা কেন? সে যে সহসা আসিয়া তাহার শুদ্ধান্তঃপুর কলঙ্কিত করিল, তৎসম্বন্ধে তাহাকে তিরস্কার না করিয়া এই মোহাচ্ছন্ন নবাব সুজাবেগ কিনা তাহারই তোষামোদ করিয়া, যেন তাহার পক্ষ সমর্থন করিলেন। তার উপর এই সারাদিনটা কাটিয়া গেল, তিনি তাহাকে শান্ত করিবার বা দুটা মিষ্ট কথা বলিবার জন্যও একটুও সময় পাইলেন না?

 প্রাণ ভরিয়া সর্ব্বস্ব সমর্পণ করিয়া ভালবাসার কি এই প্রতিদান! একান্ত ভাবে আত্মসমর্পণের কি এই পরিণাম! যাহার সুখ স্বচ্ছন্দের জন্য সে জীবন সমর্পণ করিয়াছে, এই কি তাহার এক প্রবণ হৃদয়। পত্নীর সহিত সঙ্গত ব্যবহার?

 যে স্বামী তাহার ইষ্ট, জীবনের ধ্রুবতারা, এ দুনিয়ার উজ্জ্বল ও পরিস্ফুট সুখ স্বপ্ন, তাহার এই কি ব্যবহার? এই

১২১