দাঁড়াইয়া ছিল বলিয়া, জুমেলি তাহা দেখিতে পাইল না। এই জন্য রহস্য করিয়া বলিল, “একদিনের ঘণ্টা কয়েকের বিরহের জন্য অতটা কাতর হইলে চলিবে কেন? এখন— তোমার কক্ষে চল।”
দুজনে সেই স্বল্পান্ধকার রাশি মথিত করিয়া ধীরে ধীরে প্রাসাদ মধ্যে প্রবেশ করিল।
আনারউন্নিসা জুমেলিকে বলিল—“আজ আমার তবিয়ৎটা ভাল নয়। একটু সকাল সকাল শুইব। নবাব সাহেব ফিরিয়া আসিলে আমায় জাগাইয়া দিস্।”
জুমেলি বলিল—“তাহাই হইবে। এর মধ্যে তোমার যদি কোন প্রয়োজন হয়, আমায় ডাকিও। আমি তোমার পার্শ্বের কক্ষেই রহিলাম।”
জুমেলি চলিয়া গেল। আনারউন্নিসা, অন্ধকারময় হৃদয় লইয়া তাহার দীপালোকিত কক্ষ মধ্যে প্রবেশ করিল। ধীরে ধীরে দ্বারটী বন্ধ করিয়া দিয়া, সেই দীপালোকের সম্মুখে একখানি গুলেস্তাঁ লইয়া পাঠ করিবার চেষ্টা করিল। পুস্তকে তাহার মন বসিল না। গ্রন্থখানি যথাস্থানে তুলিয়া রাখিয়া, সে চিত্তটীকে সরস করিবার জন্য তাহার বীণ্টা পাড়িয়া লইয়া চম্পকাঙ্গুলির সহায়তায় তাহার তারে দুই চারিবার মৃদু আঘাত করিল। কিন্তু বীণ্টা বড়ই বেসুরা। তাহার ঝঙ্কার বড়ই কর্কশ। সে বীণ্টাকে অশ্রদ্ধার সহিত সোফার উপর রাখিয়া, শয্যায় শয়ন করিল। কিন্তু বোধ হয় ঘুমাইতে পারিল না।
১২৬