মোগল রাজত্বের সনাতন বিধানানুসারে, জ্যেষ্ঠ রাজকুমার দারাই সিংহাসনের প্রকৃত অধিকারী। কিন্তু তাঁহার অপর তিন ভ্রাতা, তাঁহার সিংহাসন লাভের পথে অন্তরায় হইয়া দাঁড়াইয়াছেন। প্রকাশ্যে না হইলেও, গোপনে গোপনে তাঁহারা স্ব স্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য দল বাঁধিয়াছেন ৷
এই তিন জনের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান কুমার ঔরঙ্গজেব। তিনি তাঁহার সহোদর, সম্রাটের অন্যতম পুত্র সুলতান মোরাদকে কলে কৌশলে তাঁহার আয়ত্ত্বাধীন করিয়া লইয়াছেন।
মধ্যম শাহজাদা শাহসুজা, এই সময়ে বাঙ্গালা বিহার উড়িষ্যার মালেক। সরকারী শালতামামী কিত্তি বাদ, এই তিন মুলুকের সকল আয়ের উপস্বত্ত্বের ও নজরাণার মালেক হইতেছেন তিনি।
সর্ব্ব শ্রেষ্ঠ রাজপুত্র দারা শেকো, বৃদ্ধ সম্রাট শাহজাহানের অতি প্রিয়। তিনি জ্যেষ্ঠ—সুতরাং চাঘ্টাই মোগলদিগের কুলপ্রথানুসারে, তিনিই সিংহাসনাধিকারী। সম্রাট শাহজাহান বুঝিতে পারিয়াছিলেন, যে তাঁহার মৃত্যুর পূর্ব্ব হইতেই, তাঁহার পুত্রগণের মধ্যে সিংহাসন লইয়া একটা মহা বিবাদ বাধিবে। এই জন্য তিনি ঔরঙ্গজেব ও মুরাদকে দাক্ষিণাত্যে ও গুজরাটে, আর শাহ সুজাকে বাঙ্গলা মুলুকের আধিপত্য দিয়া কৌশলে দূরে পাঠাইয়া তাঁহার প্রিয়তম পুত্র দারার সিংহাসন লাভের পথ অনেকটা পরিষ্কার করিয়া দিয়াছিলেন।