পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

কেউ তো নাই। কিন্তু স্বামীর প্রতি, তাঁহার কার্য্যের প্রতি, যেখানে একবার সন্দেহ আসিয়া জুটে, সে সন্দেহের কঠিন পাশ ছিন্ন করা, অনেক রমণীর পক্ষে অসম্ভব হইয়া পড়ে। সে দিন মধ্যাহ্নে বাহারবানুর যে ঘটনাটা আনারের চোখের উপর ঘটিয়া গেল—তাহার কষ্টকর স্মৃতি, এখনও তাহার চিত্তপট হইতে অপসারিত হয় নাই। এখন সুযোগ পাইয়া, পূর্ব্ব সঞ্চিত সেই সন্দেহান্ধকারটা আরও ঘনীভূত হইয়া উঠিল।

 সুতরাং আনারউন্নিসা মনে মনে একটা সহজ সিদ্ধান্ত করিয়া লইল,যে শাহজাদার সহিত কাজ থাকার অছিলাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা! নবাবের আদরিণী বাহারবানু, কাল আমার কাছে খুবই অপমানিত হইয়াছিল। তাহার মান ভাঙ্গিবার জন্য, তিনি নিশ্চয়ই আরামবাগে গিয়াছিলেন। আর সেইখানেই আনন্দে উল্লাসে আর সেরাজি পানে, নবাব সাহেবের অর্দ্ধেক রাত্রি কাটিয়া গিয়াছে যে সেরাজি ব্যবহার করিব না বলিয়া, তিনি তাহার অঙ্গস্পর্শ করিয়া প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন— তাঁহার সে প্রতিজ্ঞা, গত রজনীতে এই স্বৈরিণীর মোহকরী ছলনার শক্তিতে খুবই শিথিল হইয়া পড়িয়াছে।

 এইরূপ একটা বিকৃত সিদ্ধান্ত করিয়া, অভিমানিনী আনারউন্নিসা, স্বামীর উপর বড়ই ক্রুদ্ধা হইল। একটী রাত্রের অদর্শনজনিত একটা আকুল দর্শনাকাঙ্ক্ষা, তাহার হৃদয়ে পোষণ করিয়া সে নবারের কক্ষের দিকে অগ্রসর হইতেছিল। কিন্তু জুমেলির মুখে এই সব কথা শুনিয়া, সে নিজের কক্ষে ফিরিয়া গেল।

১৪১