পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

কেবল উভয়েরই মন। কিন্তু সে মনের ভিতরের কথা ব্যক্ত করিতে গেলে, শুষ্ক ক্ষতে আবার আঘাত পড়ে। কাজেই মীর লতিফ নিরুত্তরে রহিল।

 আনার উন্নিসা, মীর লতিফের হাত খানি ধরিয়া একটী—সোফার উপর বসাইল। বহুদিনের পর সেই বিদ্যুন্ময় স্পর্শে, মীর লতিফের শরীরের সর্ব্বত্রই যেন একটা মৃদু বৈদ্যুতিক উত্তেজনার স্রোত বহিয়া গেল।

 আনার, মলিন মুখে লতিফের সম্মুখে দাঁড়াইয়া রহিল। লতিফ বলিল,—“বসনা তুমি ও খানে আনার।”

 আনার উন্নিসা একটী দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়া বলিল, — “না বেশ আছি! আগে বল দেখি, তুমি কেমন আছ লভিফ?”

 মীর লতিফ মলিন হাস্যের সহিত বলিল,—“মন্দই বা কি? জীবনের দিন গুলি, বিদেশে প্রবাসে কাটিতেছে মন্দ নয়। কিন্তু তোমার মুখ অত মলিন কেন? তুমি কেমন আছ আনারউন্নিসা?”

 আনারউন্নিসা একটী মৃত দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়া বলিল, — “খুব ভালই আছি আমি লতিফ্‌। অফুরন্ত ঐশ্বর্য্যের মালিক নবাব সুজাবেগের পত্নী আমি। দাসী বাঁদী আমার অনেক। গা-ভরা অলঙ্কার আমার—এতবড় প্রাসাদতুল্য অট্টালিকার স্বামিনী আমি! আমার মত সুখী কে মীর লতিফ্?”

 আনারের উচ্ছ্বাসবদ্ধ কণ্ঠস্বর, ছল ছল নেত্র দেখিয়া, মীর লতিফ বুঝিল —এক সম্ভ্রান্ত ওমরাহের পত্নী হইয়াও, আনারউন্নিসা সুখী হইতে পারে নাই। সুখ ত ঐশ্বর্য্যের দাস নয়। সুখ—মনে।

১৬২