পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

 বিকট হাস্যের সহিত মীর লতিফ বলিল,— “না—না সে ভয় তোমার নাই। তাহার মত কলুষিতা নারীর শোণিতে হস্ত রঞ্জিত করিবার প্রবৃত্তি আমার নাই। হত্যা ভিন্ন আরও অনেক উপায় আছে, যাহার সহায়তায় আমি বাহারের মুখ বন্ধ করিয়া দিতে পারি। নবাব সুজাবেগের উপর তাহার এতটা আধিপত্য কিসে, ইহার মধ্যে প্রেমের ব্যাপার ছাড়া আরও কোন কিছু আছে কি না, এ গূঢ় রহস্য যে দিন জানিতে পারিব সেই দিনই নবাব সুজা খাঁর ব্যাধির শান্তি হইবে। তুমিও কণ্টকমুক্ত হইবে।”

 এই কথা বলিয়া, উত্তেজিত মুখে মীর লতিফ উঠিয়া দাঁড়াইল। আনার উন্নিসা তাহাকে আর একটু অপেক্ষা করিবার জন্য, বার বার অনুবোধ করিলেও, সে তাহা রক্ষা করিল না। যাইবার সময় কেবলমাত্র বলিয়া গেল—“আর তিন দিন পরে, আবার তোমার সঙ্গে দেখা করিব। সেই দিন বলিব, তোমার কাজ কত দূর অগ্রসর হইল।”

 মীর লতিফ্ চলিয়া গেলে, আনার উন্নিসা সেই কক্ষমধ্যে দাঁড়াইয়া কত কি ভাবিতে লাগিল। সে এক এক বার মনে মনে ভাবিল —“নবাব সুজাখাঁ যে তাহাকে আজকাল এতটা অগ্রাহ্য করেন, বাহারবানুর প্রেমের মোহই এই তুচ্ছ তাচ্ছল্যের মূল। আর এ কথাটা মীর লতিফের কাছে বলিয়া, সে যেন খুবই একটা হাল্‌কা কাজ করিয়া ফেলিয়াছে। যদি দুঃখ ভোগই তাহার ভবিতব্য হয়, তাহা হইলে, বিধাতা রমণীকে যে সহিষ্ণুতা শক্তি দিয়াছেন, তাহা অবলম্বনে এ দুঃখটা নীরবে মনে মনে সহিয়া গেলেই ত ভাল হইত! বিধাতা স্বহস্তে তাহার ললাটফলকে যে দুঃখের ব্যবস্থা করিয়াছেন,

১৬৫