পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

তাহার শক্তি লোপ, এ ক্ষুদ্র মানব মীর লতিফ্ কি করিয়া করিবে? যে স্বামী তাহার সকল দুঃখ মোচনের কর্ত্তা— তাহার জ্বালাময় অশ্রুজল মুছাইবার অধিকারী, তিনি যখন তাহা পারিলেন না—তখন এই ক্ষুদ্র শক্তি মীর লতিফ কি করিবে?”

 কিন্তু সে জানিত, মীর লতিফ বড়ই হিংস্র প্রকৃতি। রাগ হইলে তাহার কাণ্ডজ্ঞান থাকে না। তাহার মুখ দিয়া একবার যে প্রতিশ্রুতি বাক্য বাহির হয়, তাহা পালনের জন্য সে তাহার জীবনকে বিপন্ন করিতেও কুণ্ঠিত হয় না। তবে কি মীর লতিফ তাহারা সুখের পথের কণ্টক উন্মূলিত করিবার জন্য, বাহারবানুকে হত্যা করিবে?

 আনার এই সব চিন্তায় ভয়ে শিহরিয়া উঠিল। সে তাড়াতাড়ি শয্যায় গিয়া মুখ লুকাইল। কি একটা যাতনায় যে তাহার প্রাণ মুছড়াইয়া ধরিতেছে, তাহা সে ঠিক বুঝিতে পারিল না। চারিদিক হইতে যেন একটা প্রচ্ছন্ন আতঙ্ক, ছায়াময় বিভীষিকা, তাহাকে ভয় দেখাইতে লাগিল। সে এই সব ভাবিতে ভাবিতে, সে অবসন্ন চিত্তে শয্যা আশ্রয় করিল।

 জুমেলি আজকাল নীচে থাকিত। কেননা আনার-এদানীং বড়ই নির্জ্জনতা প্রিয় হইয়া উঠিয়াছিল।

 সে দিন আবার ঘটনাবশে আকাশটা খুব মেঘাচ্ছন্ন। আকাশের গায়ে বিদ্যুৎ চমকিতেছে। সেই কক্ষ মধ্যে বিনিদ্র নেত্রে আনার একা। বাহিরে প্রকৃতির অন্ধকার, আর বায়ুর প্রবল সনসনানি, বিদ্যুতের ঝলকানি দেখিয়া সে বড়ই ভয় পাইল। নবাব সুজাখাঁর জন্য সে বড়ই ব্যাকুল হইয়া উঠিল।

১৬৬