পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

সহ্য করিতে পারিলেন না। আনারকে বক্ষে জড়াইয়া ধরিয়া বলিলেন—“আনার উন্নিসা! সত্যই তুমি দেবীরূপিণী! নারীর হৃদয়ের নীচ ভাবের মধ্যেই আমার জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়াছে। এই নারী জাতিকে বিধাতা যে কি মহত্ত্বময় উপদানে গড়িয়াছেন, তাহা আজ দেখিবার অবসর পাইলাম। আমি তোমার নরাধম স্বামী। তোমার মত এক বহুমূল্য রত্ন খোদা আমায় দিয়াছেন। সে রত্ন আমি স্বেচ্ছায় পদদলিত করিয়াছি। জীবনাধিকে! প্রিয়তমে! তোমার এ ঋণ কি কখনও শোধ করিতে পারিব? ছিঃ ছঃ! চোখের জল ফেলিও না। তোমার প্রার্থনাই আমি পূর্ণ করিলাম। এই দুনিয়ায় শয়তানের ছলনায় পড়িয়া, অনেক রকমে নাম কিনিয়াছি। আর তার সঙ্গে এ কীর্ত্তিটাও থাকিয়া যাউক, যে চরিত্রভ্রষ্ট, নিষ্ঠুর, হৃদয়হীন নবাব সুজাখাঁ, দত্তাপহারী রূপে, তাহার পত্নীর স্ত্রীধন অপহরণ করিয়া নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করিয়াছে। নিজের জঘন্য জীবন বাঁচাইয়াছে।'

 প্রকাশ্যে একথা বলিলেও, তাঁহার মনের ইচ্ছা অন্যরূপ। তিনি মনে মনে সংকল্প করিলেন—“আমার বিষয় সম্পত্তি বন্ধক দিয়াও যদি কোন উপায়ে এই ছয়লক্ষ টাকা সংগ্রহ করিতে পারি, তাহা হইলে এ অলঙ্কারের এক খানিও আমি স্পর্শ করিব না।”

 এইরূপ সংকল্প স্থির করিয়া নবাব সুজাখাঁ বলিলেন—“ভাল তাহাই হইবে। তুমি এখন তোমার সংসার ধর্ম্ম কর গে।”

 আনার উন্নিসা প্রসন্ন মুখে, ভয় ভাবনা রহিত হৃদয়ে, স্বামীর কক্ষ ত্যাগ করিল।

১৭২