পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

 কক্ষটী শব্দশূন্য। দীপশিখা গুলি কাঁপিয়া কাঁপিয়া জ্বলিতেছে। তাঁহার চিন্তাব্যাকুল হৃদয়ের মধ্যেও যেন সেই মৃদু কম্পনের ঘাত প্রতিঘাত উঠিয়াছে। এটা নিরর্থক আশা প্রতীক্ষার পরিণাম। কোন একটা কূট সমস্যার সমাধানের উপায় হীনতা জন্য—দারুণ অবসাদ!

 সহসা এই সময়ে সেই উন্মুক্ত দ্বার দিয়া এক রমণী-মূর্ত্তি ধীর পদে সেই কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিল। অর্দ্ধাবনতভাবে একটা কুর্ণীস করিয়া সহাস্যমুখে বলিল,—“বন্দেগি জনাব!”

 সুজাবেগ মুখ তুলিয়া দেখিলেন,—উজ্জ্বল বেশ পরিহিতা সুরমা-রঞ্জিত বিচিত্র কটাক্ষ-শালিনী, স্ফুরিতাধরা, বাহারবানু তাঁহার সম্মুখে। তিনি একটু অপ্রসন্ন ভাবে বলিলেন,—“এত দেরী কর্‌লে যে বাহারবানু?”

 বাহারবানু সহাস্যমুখে বলিল,— “আরামবাগের গুপ্তদ্বারের চাবিটা খুঁজিতেই দেরী হইয়া গিয়াছে। নবাব সাহেবকে অনর্থক কষ্ট দেওয়ার জন্য, বাঁদী মার্জ্জনা ভিক্ষা করিতেছে।”

 সুজাবেগ বুঝিলেন—এট। বিদ্রূপ। এ বিদ্রূপের জ্বালা বড়ই তীব্র। জ্বালার তীব্রতা কমাইবার জন্য, তিনি আর এক পাত্র সেরাজি পান করিলেন। তার পর বাহারবানুর দিকে চাহিয়া বলিলেন,—“বাহার! তুমি অতি পাষাণী! অতি অকৃতজ্ঞ। তোমার প্রাণ নাই,—হৃদয় নাই,—মমতা নাই,—করুণা নাই! তোমায় আমি না দিয়াছি কি বাহারবানু? কেন আমাকে এ ভাবে নির্য্যাতন করিতেছ?”

১৭৬