জনাব! আজ আমাদের মধ্যে দেনা পাওনার ফারখত হইয়া গেল। আর আপনার সম্মুখে আমি আসিব না।”
নবাব সুজাবেগ তখনই ক্ষিপ্ত ব্যাঘ্রের মত লম্ফ দিয়া, বাহার বানুর গ্রীবাদেশ ধারণ করিয়া, সজোরে তাহাকে মেঝের উপর ফেলিয়া দিয়া বলিলেন —“কোথায় যাইবি তুই শয়তানী! যে আরামবাগ এক দিন তোর সাধের বিলাস-কানন ছিল, আজ সেখানেই তোর সমাধি রচিত হইবে।”
বাহারবানু সাহসে ভর করিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল। দেখিল, সাক্ষাৎ মৃত্যুরূপে, নবাব সুজ়াবেগ তাহার সম্মুখে দাঁড়াইয়া। নবাবের মুখের অবস্থা দেখিয়া সে বুঝিল, তাহার পরিত্রাণের আর কোন উপায় নাই। নবাব তাহাকে হত্য। করিতেই দৃঢ় সংকল্প।
সে কি ক্ষিপ্রতার সহিত তাহার বক্ষ বসন হইতে এক তীক্ষ্ণমুখ ছোরা বাহির করিয়া, নবাব সুজাখাঁর স্কন্ধদেশে সজোরে আঘাত করিল। মদিরা-বিহ্বল সুজাখাঁ, সে আঘাতের প্রচণ্ড শক্তি উপেক্ষা করিতে না পারিয়া, মাটীতে পড়িয়া গেলেন। আর সেই শয়তানী বাহারবানু, সেই রত্নাধারটি লইয়া তখনই সেই কক্ষ ত্যাগ করিল।
গুপ্ত দ্বার খোলা ছিল। সেই দ্বারের অদূরে একখানি গাড়ীও দাঁড়াইয়া ছিল। শয়তানী সেই গাড়ীতে উঠিয়া চলিয়া গেল।
একজন দূরে থাকিয়া তাহার এই পলায়ন ব্যাপার লক্ষ্য করিল। সে আর কেউ নয়—মীর লতিফ্। মীর লতিফ্ কি করিয়া এখানে আসিল, তাহা পরে বলিতেছি।