পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

ছিলেন। তখনও মৃদু ভাবে শ্বাস প্রশ্বাস বহিতেছে। কিন্তু নেত্রদ্বয় নিমীলিত। প্রবল জ্বর আসিয়া দেহাধিকার করিয়াছে।

 হকিম আসিয়া রোগীর অবস্থা পর্য্যবেক্ষণ করিয়া বলিলেন, “এই জ্বরটা ছাড়িবার সময় একটা বিভ্রাট ঘটিতে পারে। আঘাত যে খুব গুরুতর তা নয়। তবে বোধ হয়, ছুরিকা খানি বিষাক্ত! সুতরাং জীবন খুবই সঙ্কটাপন্ন।”

 হকিম ব্যবস্থা করিয়া চলিয়া যাইবার সময় বলিয়া গেলেন, “প্রভাতে কোনরূপ খারাপ লক্ষণ দেখিলেই, আমায় সংবাদ দিবেন।”

 আনার উন্নিসার তখন পূর্ণ চেতনা হইয়াছে। সে তখনই আসিয়া স্বামীর শয্যাপার্শ্বে বসিল। জুমলা সাহেবের পুনঃপুনঃ নিষেধ স্বত্বেও, সে শয্যাপার্শ্ব হইতে নড়িল না।

 সমস্ত রাত্রিটা একই অবস্থা। সেই কান্তিময় দেহ নিস্পন্দে শয্যায় পড়িয়া আছে। হৃদয়ের স্পন্দন অতি মৃদু। চক্ষুদ্বয় নিমীলিত। আনার, একদৃষ্টে স্বামীর মুখের দিকে চাহিয়া আছে। সে ক্রমাগতই ভাবিতেছিল—কে এ সর্ব্বনাশ করিল? কে তাহাকে বলিয়া দিবে, কিসে নবাবের জীবন রক্ষা হয়।

 স্বামীর শয্যাপার্শ্বে বসিয়া অশ্রুপূর্ণনেত্রে উর্দ্ধে চাহিয়া আনার যুক্তকরে বলিল—“বিধাতা! দয়াময়! পথের ভিখারিণী হইতেও আমি প্রস্তুত। আমার স্বর্ধ্বম্মের বিনিময়ে আমার স্বামীকে ফিরাইয়া দাও। যাহা একদিন তুমি করুণার দান রূপে স্বেচ্ছায় আমায় দিয়াছিলে, তাহা আজ নিষ্ঠুরের মত কাড়িয়া লইও না।”

১৮২