পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

সংসারে স্পৃহা নাই। একখানি নীলবসনে তাহার দেহ আবরিত। সর্ব্বদেহ অলঙ্কার শূন্য। মার্জ্জনার অভাবে, চুলে জট পড়িয়া যাইতেছে। আহারে স্পৃহা নাই—লোকের সহিত মিশিতে বাসনা নাই। দিনরাত মর্ম্মভেদী আকুল নিশ্বাস, তীব্রশোক জনিত অস্ফুট ক্রন্দন— গণ্ডবাহী মলিন অশ্রুধারা।

 প্রতিদিন গভীর রাত্রে, আনার অসংখ্য সুগন্ধি দীপ ও সুগন্ধ পুষ্প লইয়া, স্বামীর মসৌলিয়ামের মধ্যে যায়। সুস্নিগ্ধ গোলাপ বারিতে, সেই সমাধিতল মার্জ্জনা করে। সেই মর্ম্মর কক্ষের মধ্যে অগুরু ও লোবানের দীপ জালিয়া দেয়। তারপর প্রেমস্মৃতি সুগন্ধিত অশ্রুধারায়, সেই সমাধিতল সিক্ত করিয়া ঘরে ফিরিয়া আসে।

 জুমলা সাহেব, এখন বিষয় কার্য্য দেখিতেছেন। আনারের অভিলাষ অনুসারে, তাহার রত্নালঙ্কারগুলি বিক্রয় করিয়া, ধর্ম্মশালায় দরিদ্র পালনের জন্য দেওয়া হইয়াছে। মীরলতিফের ও এই দুই মাস কোন সংবাদ নাই।

 জুমলা সাহেব কন্যাকে প্রকৃতিস্থ করিবার জন্য মিষ্ট কথায় নিত্যই বুঝান। তিনি একদিন বলিলেন,—“আনার উন্নিসা! দেখিতেছি স্মৃতি তোমার বড়ই যন্ত্রণা দিতেছে। চল তোমাকে লইয়া আমি দিন কতক তীর্থ ভ্রমণ করিয়া আসি!”

 আনারউন্নিসা কাঁদিতে বলিল— “ঐ যে পবিত্র মসৌলিয়াম, যাহাতে আমার স্বামীর দেহ চির বিশ্রাম লাভ করিতেছে, তাহাই যে আমার মহাতীর্থ! জীবনে তাঁর পরিচর্য্যা করিতে

১৯১