পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

যেন একটা পাষাণের ভার নামিয়া গেল। তাহার জীবনের আশার উজ্জ্বল আলোকটি নিরাশার প্রমত্ত বায়ুতে নিবিয়া যাইবার মত হইয়াছিল। খুব একটা জমাট অন্ধকার তাহার চোখের সম্মুখে ঘনীভূত হইয়া উঠিতেছিল। সেটা যেন খুব দূরে সরিয়া গেল।

 লতিফ আনন্দ-উদ্ভাসিত চিত্তে বলিল,—“জীবনে-মরণে তুমি আমার। সুখে দুঃখে—তুমি আমার! সম্পদে বিপদে তুমি আমার। তুমি যে আমার হৃদয় আলো করিয়া আছ আনার উন্নিসা! এ হৃদয়ের মধ্যে ভাল বাসার হৈম সিংহাসনে বসাইয়া রাখিয়াছি যে—আমি তোমাকে। একটা সুখস্বপ্নের ঘোর, যাহার উন্মত্ততায় অভিভূত হইয়া, সংসারের একটা পিচ্ছিল ও বন্ধুর পথে, অসম্ভব অদম্য উৎসাহের সঙ্গে চলিয়া আসিয়াছি, করুণাময় বিধাতা, যে আমার সেই অতি দূর্ল্লভ সুখ-স্বপ্ন চূর্ণ করিয়া দিবেন,—এমন কোন পাপ তো আমি তাঁর কাছে করি নাই। তবে ভবিতব্য যদি অন্যরূপ হয়,—সে স্বতন্ত্র কথা। তাহা হইলে তোমার ধ্যান, তোমার চিন্তা, আমি এ জীবন থাকিতে ছাড়িব না। খোদা সাক্ষী—তুমি আমার। আমার এই একপ্রবণ প্রেম জ্যোতির্ম্ময় হৃদয় সাক্ষী—তুমি আমার! জানিও তুমি আনার উন্নিসা- আমার এ অস্তিত্ব কেবল তোমারই জন্য। এ দুনিয়ায় যাহা কিছু স্পৃহনীয়, ভোগ্য, ইপ্সিত, সবই আমি হেলায় বিসর্জ্জন করিতে পারি, কিন্তু এ প্রাণ থাকিতে তোমাকে নয়, তোমার চিন্তাকেও নয়।”

২৬