পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

সেই অন্ধকারময় পথ খুব উজ্জ্বল। তাহার কর্ত্তব্য অতি পরিস্ফুট। তাহার আত্মসুখাভিলাষী সংঙ্কীর্ণ হৃদয়, যেন মহত্ত্বের জ্যোতি কণায় পরিপূর্ণ। সে এই দীর্ঘ চিন্তার পর বুঝিল—“এই সিদ্ধ ফকির সাধু পুরুষ জুম্মাশা যাহা বলিয়াছেন, তাহাই ঠিক। ত্যাগেই মহত্ত্ব! স্বার্থ পরিহারেই দেবত্ব!

 তখন তাঁহার হৃদয়—মহাঝটিকার পরে বিশাল বারিধির মত অতি শান্ত। তাহা যেন উন্মাদ তরঙ্গের তাণ্ডবলীলা বিহীন। তখন সে হৃদয়ে জ্বালার পরিবর্ত্তে শান্তি, আসঙ্গলিপ্সার পরিবর্ত্তে স্বার্থহীন উদার আনুরক্তি, সংকীর্ণতার পরিবর্ত্তে পরার্থপরতা, আসিয়া দেখা দিয়াছে।

 চিন্তাশূনা, বিপ্লববিহীন শান্তহৃদয়ে, মীর লতিফ, পুনরায় তাহার কক্ষে ফিরিয়া আসিল। যে শয্যা একটু আগে তাহার পক্ষে কণ্টকাকীর্ণ বলিয়া বোধ হইয়াছিল, তাহা যেন এখন খুব শীতল ও আরামপ্রদ। কেননা—সে তাহার ভবিষ্যতের কর্ত্তব্যটি যে, কি, তাহা স্থির করিয়া লইয়াছিল।

 কিন্তু সে সুখ নিদ্রাতেও তাহার নিস্তার নাই। সে স্বপ্নে দেখিল, যেন আনারউন্নিসা তাহার শয্যা পার্শ্বে দাঁড়াইয়া বলিতেছে— “ছার আমি! এ জগতে আমার চেয়ে আরও কত সুন্দরী আছে! স্নেহে, মায়ায়, ভালবাসায়, সহানুভূতিতে, অতি নগণ্যা আমি। আমার চেয়ে আরও কত আছে—যাহারা তোমার জন্য জীবন সমর্পণ করিতে পারে। এ রূপ, এ দেহ, ত চিরদিনের জন্য নয়। বাসিফুলের মত একদিন না একদিন ধরণীর বুকে ঝরিয়া পড়িবে।

৯০