পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

 তারপর ব্যাকুল হৃদয়ে একটী মর্ম্মভেদী দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া সে পুনরায় বলিল—“লতিফ্! লতিফ্! আমায় মার্জ্জনা কর তুমি। তোমার হৃদয়ে যে দেবতার মহত্ত্ব। তোমার প্রাণ যে আত্মত্যাগের সজীব মন্ত্রে উদ্দীপিত। তোমার হৃদয় যে আমার সুখের জন্যই কাতর। আমার হিতের জন্যই যে তুমি অতি ব্যাকুল। তাই তুমি প্রাণের মহত্ত্ব দেখাইয়া নিজের আশাভরসা,তৃপ্তি আকাঙ্ক্ষা,সুখের বাসনা বিসর্জ্জন দিয়া, আমার সন্মুখ হইতে চলিয়া গেলে! যেখানে থাক না তুমি - সুখে থাকিও। আর আমায় আশীর্ব্বাদ কর তুমি, আমি যেন জীবনের এই পরিবর্ত্তনে, এই পরীক্ষাময় সংসারের কঠোর কর্ত্তব্য— স্বামীর প্রতি কর্ত্তব্যগুলি করিতে পারি। দেবতুল্য তুমি! আমার মনের কথা বুঝিতে ত তোমার বাকী নাই। একদিন নিজের দেহের বহুমূল্য শোণিত দিয়া, তুমিই যে আমার জীবন রক্ষা করিয়াছিলে। যদি কখনও তোমার এরূপ কোন বিপদ উপস্থিত হয়, খোদার নিকট প্রার্থনা করি, আমি যেন তোমার হিতের জন্য, আমার হৃদয়ের শোণিত সেইরূপে ঢালিয়া দিতে পারি।”

 সেই দিনের প্রভাত হইতেই আনারউন্নিসার জীবনে নূতন পরিবর্ত্তন আরম্ভ হইল। এই মীর লতিফকে ভুলিবার জন্য জন্য সে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করিল।

 পুরূষের অপেক্ষা নারীর হৃদয়ের শক্তি যেন একটু বেশী। আর সহিষ্ণুতা থুবই বেশী। আনারউন্নিসা এই চেষ্টা ও সহিষ্ণুতার বলে, হৃদয়ের সহিত মহাসংগ্রাম আরম্ভ করিয়া দিল।

৯৬