পাতা:দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ - চণ্ডীচরণ সেন.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২ দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ ।

স্বীকার করিয়াছিল। কিন্তু সে ব্রাহ্মণকন্যা! দেবীসিংহের গৃহ হইতে পলায়ন পুর্বাক আপন ধর্ম রক্ষা করিয়াছেন। এখন তোযাকে সেই ব্রাহ্মণকল্তার পরিবর্তে গঙ্গাগোবিন্দ সিংহের নিকট প্রেরণ করিবে। তুমি এক মুহূর্তও এখানে বিলম্ব করিও না, এখনই পলায়ন কর ।”

“(সক্রোধে) দেবীসিংহ কি গঙ্গাগোবিন্দ সিংহের কোন সাধ্য নাই তাহারা আমার ধর্বনষ্ট করিতে পারে । আপনার পুত্র আমাকে বরাবরই বলিতেন যে, রনণীগণ স্বেচ্ছা পূর্বক ধর্মপথ পরিত্যাগ না করিলে জগতে এমন কোন লোক নাই যে তাহাদের ধর্্মনষ্ট করিতে পারে। আমি তখন তাহার কথা বিশ্বাস করিতাম না। তাহার সঙ্গে কত তর্ক করিয়াছি। গ্রে সাহেবের লোকদিগের সঙ্গে বিবাদ করিতে কত নিষেধ করিয়াছি। তখন তিনি বিরক্ত হইয়া আমার সঙ্গে আর কথ! বলিতেন না। কিন্তু এখন বুঝি- তেছি যে তিনি যাহা যাহা বপিয়াছিলেন সকলই সত্য। গত ১২ বৎসর যাবত নান! বিপদ এবং বিবিধ সন্কটাবস্থায় পড়িয়|৷ এখন নিজেই দেখিতেছি যে, নারীজাতির ধর্ম রক্ষার ভার স্বয়ং ভগবান স্বহস্তে গ্রহণ করিয়াছেন । ছুর্বালের বল যে একমাত্র ঈশ্বর তাহার অণুমাত্রও সন্দেহ নাই। আমি নিজে ইচ্ছা করিয়| ধর্ম বিসর্জন না করিলে কে আমার ধর্মনষ্ট করিতে পারে ? কিন্তু আমার আরও ছুঃখের বিষয় হইল যে, এখন এই হতভাগিনীর নিমিত্ত আপনাকে না জানি কতই প্রহার করে।”

রমণী এই কথা বলিবামাত্র উচ্ছ্বলিত শোকাবেগে তাহার কণ্ঠাবরোধ হইল। তিনি মুচ্ছিত হইয়া ভুমিতলে পড়িয়া গেলেন। বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ তাহাকে ধরিয়! উঠাইয়৷ আপনার ক্রোড়ে বসাইলেন। কিছুকাল পরে যুবতী সংজ্ঞা প্রাপ্ত হইয়| আবার বলিতে লাগিলেন--

“হা পরমেশ্বর এই হতভাগিনীর নিমিত্ত এই পরম ধাণ্মিক বৃদ্ধকে এত লাঞ্ছনা ভোগ করিতে হইবে । এ হতভাগিনীকে কেন তুমি রূপ ও সৌন্দর্য প্রদান কর্রিয়াছিলে। যাহার নিমিত্ত 'নারীজাতির রূপ--যাহার নিমিত্ত সৌন্দর্য্য -তিনি ত আমার চলিয়াই গিয়াছেন, তবে রূপ ও সৌন্দর্য্যের আর প্রয়োজন কি? এই মুহূর্তেই আমি আপন নাসিকা কর্ণ ছেদ করিব। শরীর ক্ষত.বিক্ষত করিব”

এই বলিয়! রমণী আপন মন্তকের কেশ ছিন্ন করিতে লাগিলেন, বারস্বার সজোরে ললাটে করাথাত করিতে আরম্ভ করিলেন ।