দিয়ে একটু নিশ্চিন্ত হওয়াই যাক না। এই বলিয়া সে ষোড়শীর মুখপানে চাহিয়া একটু হাসিল, এবং অগ্রসর হইয়া দ্বার অর্গলবদ্ধ করিয়া দিল, যাহার গৃহ তাহার অনুমতির অপেক্ষামাত্র করিল না।
ষোড়শীর মুখ ফ্যাকাশে হইয়া গেল। একবার কথা কহিতে গিয়া তাহার কণ্ঠে বাধিল, তার পরে স্বর যখন ফুটিল, তখন সেই স্বর ভয়ে কাঁপিতে লাগিল, কহিল, সাগর নেই―
জীবানন্দ বলিল, নেই? ব্যাটা গেল কোথায়?
ষোড়শী কহিল, আপনারা জানেন বলেই ত―
জীবানন্দ কহিল, জানি বলে? কিন্তু আপনারা কারা? আমি ত বাষ্পও জানতাম না।
ষোড়শী বলিল, নিরাশ্রয় বলেই ত লোক নিয়ে আমাকে মারতে এসেছেন। কিন্তু আপনার কি করেচি আমি?
জীবানন্দ কহিল, লোক নিয়ে মারতে এসেচি! তোমাকে! মাইরি না! বরঞ্চ মন কেমন করছিল বলে দেখতে এসেছি।
ষোড়শী আর কথা কহিল না। তাহার চোখে জল আসিতেছিল, এই কদর্য উপহাসে তাহা একেবারে শুকাইয়া গেল। এবং সেই শুষ্ক চক্ষু ভূমিতলে নিবদ্ধ করিয়া সে নিঃশব্দে বসিয়া রহিল; এবং অদূরে বসিয়া আর একজন তাহারই অনত মুখের প্রতি লুব্ধ তৃষিত দৃষ্টি স্থির করিয়া তাহারি মত চুপ করিয়া রহিল।
আঠার
অলকা।
বলুন।
তোমার এখানে তামাক-টামাকের ব্যবস্থা নেই বুঝি?
ষোড়শী একবার মুখ তুলিয়াই আবার অধোমুখে স্থির হইয়া রহিল।
জবাব না পাইয়া জীবানন্দ সজোরে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস মোচন করিয়া বলিল, ব্রজেশ্বরের কপাল ভাল ছিল; দেবী-রানী তাকে ধরে আনিয়াছিল সত্যি, কিন্তু অম্বুরী তামাক খাইয়েছিল, এবং ভোজনান্তে দক্ষিণা দিয়েছিল। বিদায়ের পালাটা আর তুলব না, বলি, বঙ্কিমবাবুর বইখানা পড়েচ ত?
ষোড়শী স্থির করিয়াছিল এই পাষণ্ড আজ তাহাকে যত অপমানই করুক সে নিরুত্তরে সহ্য করিবে, কিন্তু জীবানন্দের কণ্ঠস্বরের শেষ দিকটায় হঠাৎ কেমন যেন তাহার সঙ্কল্প ভাঙ্গিয়া দিল; বলিয়া ফেলিল, আপনাকে ধরে আনলে সেইমত ব্যবস্থাও থাকত―অনুযোগ করতে হতো না।
১০৪