নামে আরও একটা ওয়ারেণ্ট ছিল। মাসখানেক পূর্বে রেলগাড়িতে একজন বন্ধু সহযাত্রীর ব্যাগ নিয়ে তিনি অন্তর্ধান হন। ফলে আরও দেড় বৎসর। একুনে এই বছর-দুই নিরদ্দেশের পর বীজগাঁয়ের ভাবী জমিদারবাবু আবার যখন রঙ্গমঞ্চে পুনঃপ্রবেশ করলেন, তখন কোথায় বা অলকা, আর কোথায় বা তার মা।
জীবানন্দের আত্মকাহিনীর এক অধ্যায় শেষ হইল। তার পরে দু’জনেই নিঃশব্দে স্থির হইয়া বসিয়া রহিল।
রাত কত?
বোধহয় আর বেশী বাকী নেই।
তা হলে এ অন্ধকারে বাড়ি গিয়ে আর কাজ নেই।
কাজ নেই? তার মানে?
ষোড়শী কহিল, কম্বলটা পেতে দিই, আপনি বিশ্রাম করুন।
জীবানন্দের দুই চক্ষু বিস্ফারিত হইয়া উঠিল, কইল, বিশ্রাম করব? এখানে?
ষোড়শী কহিল, ক্ষত কি?
কিন্তু বড়লোক জমিদারের যে এখানে কষ্ট হবে অলকা?
ষোড়শী বলিল, হলেও থাকতে হবে। গরীবের দুঃখটা আজ একটুখানি জেনে যান।
জীবানন্দ চুপ করিয়া রহিল। তাহার চোখের কোণে জল আসিতেছিল, ইচ্ছা হইল বলে, আমি জানি সব, কিন্তু বুঝিবার মানুষটা যে মরিয়াছে। কিন্তু এ কথা না বলিয়া কহিল, যদি ঘুমিয়ে পড়ি অলকা?
অলকা শান্তভাবে জবাব দিল, সে সম্ভাবনা ত রইলই।
ঊনিশ
জীবানন্দের উচ্ছিষ্ট ভোজনপাত্র ও ভুক্তাবশেষ প্রভৃতি ফেলিয়া দিতে এবং রান্নাঘরের কিছু কিছু কাজ সারিয়া দ্বার বন্ধ করিয়া আসিতে ষোড়শী বাহিরে চলিয়া গেলে, তাহার সেই চিঠির ছেঁড়া টুকরোখানা জীবানন্দের চোখে পড়িল! হাতে তুলিয়া লইয়া সেই মুক্তার মত সাজানো অক্ষরগুলির প্রতি মুগ্ধচক্ষে চাহিয়া সে প্রদীপের আলোকে রাখিয়া সমস্ত লেখাটুকু একানিশ্বাসে পড়িয়া ফলিল। অনেক কথাই বাদ গিয়েছে, তথাপি এটুকু বুঝা গেল, লেখিকার বিপদের অবধি নাই, এবং সাহায্য না হোক, সহানুভূতি কামনা করিয়া এ পত্র যাহাকে সে লিখিয়াছে, সে নিজে যদিও নারী, কিন্তু অক্ষরের আড়ালে দাঁড়াইয়া আর এক ব্যক্তিকে ঝাপসা দেখা যাইতেছে যাহাকে কোনমতেই স্ত্রীলোক বলিয়া ভ্রম হয় না। এই পত্র তাহাকে যেন পাইয়া বসিল। একবার, দুইবার শেষ করিয়া যখন সে আরও একবার পড়িতে
১১০