কিছুরই আর তাহার কাজ নাই―সকল বন্ধন হইতে অব্যাহতি পাইয়া অজানা কোথাও গিয়া লুকাইতে পারিলে যেন বাঁচে। সকলের চেয়ে বেশী মনে হইল নির্মল যেননা আসে। অনেকক্ষণ নীরবে স্থির থাকিয়া শেষে আস্তে আস্তে বলিল, বেশ, তাই হবে। যথার্থ অভিভাবক কে, সে নিয়ে আমি ঝগড়া করব না, আপনারা যা মনে করেন আমি গেলে যদি মন্দিরের ভাল হবে, আমি যাবো।
ইহাকে বিদ্রূপ মনে করিয়া জীবানন্দ জ্বালার সহিত কহিল, তুমি যে যাবে সে ঠিক! কারণ, যাতে যাও তা আমি দেখব।
ষোড়শী তেমনি নম্রকণ্ঠে বলিল, আমি যখন যেতে চাচ্চি, তখন কেন আপনি রাগ করচেন? কিন্তু আপনার উপর এই ভার রইল, যেন মন্দিরের সত্যি ভাল হয়।
জীবানন্দ জিজ্ঞাসা কারিল, তুমি কবে যাবে?
ষোড়শী উত্তর দিল, আপনারা যখনই আদেশ করবেন। কাল, আজ, এখন―যখনি বলবেন!
জীবানন্দের ক্রোধ বাড়িল বৈ কমল না, কহিল, কিন্তু নির্মলবাবু? জামাইসায়েব?
ষোড়শী কাতর হইয়া বলিল, তাঁর নাম আর করবেন না।
জীবানন্দ কহিল, আমার মুখে তাঁর নামটা পর্যন্ত সহ্য হয় না? ভাল। কিন্তু তোমাকে কি দিতে হবে না?
আমাকে কিছুই দিতে হবে না।
জীবানন্দ কহিল, এ ঘরখানা পর্যন্ত ছাড়তে হবে জানো? এ-ও দেবীর॥
ষোড়শী ঘাড় নাড়িয়া সবিনয়ে কহিল, জানি। যদি পারি ত কালই ছেড়ে দেব।
কালই? ভাল, কোথায় থাকবে ঠিক করেচ?
ষোড়শী কহিল, এখানে থাকব না, এর বেশী কিছুই ঠিক করিনি। একদিন কিছু না জেনেই ভৈরবী হয়েছিলাম, আজ বিদায় নেবার সময়েও আমি এর বেশী কিছুই চিন্তা করব না।
জীবানন্দ চুপ করিয়া রহিল। তার হঠাৎ মনে হইল এতক্ষণ কোথায় যেন তাহার ভুল হইতেছিল।
ষোড়শী বালিল, আপনি দেশের জমিদার, চণ্ডীগড়ের ভালমন্দের বোঝা আপনার উপর রেখে যেতে শেষ সময়ে আর আমি দুশ্চিন্তা করব না! কিন্তু আমার বাবা বড় দুর্বল, তাঁর উপর ভার দিয়ে আপনি যেন নিশ্চিন্ত হবেন না।
তার কণ্ঠস্বর ও কথায় বিচলিত হইয়া জীবানন্দ জিজ্ঞাসা করিল, তুমি কি সত্যসত্যই চলে যেতে চাও নাকি?
ষোড়শী তাহার পূর্বকথার অনুবৃত্তিস্বরূপ কহিতে লাগিল, আর আমার দুঃখী দরিদ্র ভূমিজ প্রজারা―এদের সুখ-দুঃখের ভারও আমি আপনাকে দিয়ে চললাম।
জীবানন্দ তাড়াতাড়ি কহিল, আচ্ছা তা হবে হবে। কি তারা চায় বল ত?
ষোড়শী কহিল, সে তারাই আপনাকে জানাবে। কেবল আমি শুধু আপনার
১১৫