কথাটাই যাবার আগে তাদের জানিয়ে যাবো। হঠাৎ সে বাইরের দিকে উঁকি মারিয়া কহিল, কিন্তু এখন আমি চললাম আমার স্নান করতে যাবার সময় হলো। বলিয়া সে তাহার কাপড় ও গামছা আলনা হইতে তুলিয়া লইয়া কাঁধে ফেলিল।
জীবানন্দ বিস্ময়ে অবাক হইয়া কহিল, স্নানের সময়? এই রাত্রে?
রাত্রি আর নেই। আপনি এবার বাড়ি যান। বলিতে বলিতেই ষোড়শী ঘর হইতে বাহির হইয়া পড়িল। তাহার এ অকারণ আকস্মিক ব্যস্ততায় জীবানন্দ নিজেও ব্যগ্র হইয়া উঠিল? কহিল, কিন্তু আমার সকল কথাই যে বাকী রয়ে গেল, অলকা?
ষোড়শী কহিল, আপনি বাড়ি যান।
জীবানন্দ জিদ করিয়া কহিল, না। কথা আমার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি এইখানেই তোমার প্রতীক্ষা করে রইলাম!
প্রত্যুত্তরে ষোড়শী থমকিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, না, আপনার পায়ে পড়ি, আমার জন্যে আর আপনি অপেক্ষা করবেন না। বলিয়া সে বামদিকে বনপথ ধরিয়া দ্রুতপদে অদৃশ্য হইয়া গেল।
কুড়ি
সেদিন প্রাতঃকালটা হঠাৎ একটা ঘন কুয়াশায় সমস্ত অস্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছিল। রায়মশাই সেইমাত্র শয্যাত্যাগ করিয়া বাহিরে আসিয়াছিলেন; একজন ভদ্রব্যক্তিকে প্রবেশ করিতে দেখিয়া কহিলেন, কে ও?
আমি নির্মল, বলিয়া জামাতা কাছে আসিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিল। এই আকস্মিক আগমনে তিনি কোনরূপ বিস্ময় বা হর্ষ প্রকাশ করিলেন না। চাকরদের ডাকিয়া বলিলেন, কে আছিস রে, নির্মলের জিনিসপত্রগুলো সব হৈমর ঘরে রেখে আয়। তা গাড়িতে কষ্ট হয়নি ত বাবা? খোকা, হৈম, এরা সব ভাল আছে ত?
নির্মল ঘাড় নাড়িয়া জানাইল, সকলে ভাল আছে।
রায়মহাশয় কহিলেন, কিন্তু একা এলে কেন নির্মল, মেয়েটাকে সঙ্গে আনলে ত আর একবার দেখা হতো?
নির্মল বলিল, দু'-চার দিনের জন্যে আবার―
রায়মশাই ঈষৎ হাস্য করিলেন; বলিলেন, একি দু’-চার দিনের ব্যাপার বাবা, দু’-চার মাসের দরকার। যাও, ভেতরে যাও―মুখ-হাত ধোও গে।
নির্মল ভিতরে আসিয়া দেখিল এখানেও সেই একই ভাব। যে প্রকারেই হোক তাহার আসার সম্ভাবনা কাহারও অবিদিত নয়, এবং সেজন্য কেহই প্রসন্ন নহেন। মুখ-হাত ধোয়া, কাপড় ছাড়া প্রভৃতি সমাধা হইলে গরম চা এবং কিছু জলখাবার
১১৬