অন্তরের একপ্রান্তে যেমন বেদনা বোধ করিল, তেমনি আর একপ্রান্ত তাহার কি একপ্রকার কলুসিত আনন্দে একনিমেষে পরিপ্লুত হইয়া গেল।
নির্মলকে ঘরে আনিয়া ষোড়শী কম্বল পাতিয়া বসিতে দিল, জিজ্ঞাসা করিল, পথে কষ্ট হয়নি?
নির্মল বলিল, না। কিন্তু মন্দিরে আজ আপনার কাজ নেই?
ষোড়শী কহিল, অর্থাৎ আজ মন্দিরের রবিবার কিনা! তাহার পরে বলিল, কাজ আছে, সকালে একদফা করেও এসেচি। যেটুকু বাকী আছে সেটুকু বেলাতে করলেও হবে। হাসিয়া কহিল, জামাইবাবু, এ আপনাদের কোর্ট-কাছারি নয়, মন্দির। ঠাকুর-দেবতারা তাদের দাসদাসীদের কখনো মুহূর্তের ছুটি দেন না, কানে ধরে চব্বিশ ঘণ্টা সেবা করিয়ে নিয়ে তবে ছাড়েন।
কিন্তু এ চাকরি ত আপনি ইচ্ছে করেই নিয়েচেন।
ইচ্ছে করে? তা হবে। বলিয়া ষোড়শী সহসা একটুখানি হাসিয়া কহিল, আচ্ছা, আসার একটু খবর দিলেন না কেন?
নির্মল কহিল, সময় ছিল না। কিন্তু তার শাস্তিস্বরূপ শ্বশুরবাড়িতে যে খাতির পাইনি, অন্ততঃ তাঁরা যে আমাকে দেখে খুশী হননি, এ কথা আপনি জানলেন কি করে? এবং আমার আসার সংবাদ আসার পূর্বেই কে প্রচার করে দিল বলতে পারেন?
ষোড়শী কহিল, বলতে পারিনে, কিন্তু আন্দাজ করতে পারি।
নির্মল বলিল, আন্দাজ করতে ত আমিও পারি, কিন্তু সত্যি কে করেচে এবং কোথায় সে খবর পেলে, জানেন ত আমাকে বলুন। আশা করি আপনার দ্বারা একথা প্রকাশ হয়নি।
ষোড়শী কহিল, হাসিল, কোন আশা করতেই আমি কাউকে নিষেধ করিনে। কিন্তু জেনে আপনার লাভ কি? আপনি এসেচেন এ খবরও সত্যি, আমারই জন্যে এসেচেন একথাও ঠিক। তার চেয়ে বরঞ্চ বলুন, আসা সার্থক হবে কিনা? আমাকে উদ্ধার করতে পারবেন কিনা?
নির্মল কহিল, প্রাণপণে চেষ্টা করব বটে।
যদি কষ্ট হয় তবুও?
নির্মল ঘাড় নাড়িয়া বলিল, যদি কষ্ট হয় তবুও!
ষোড়শী হাসিয়া ফেলিল। নির্মল তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া নিজেও একটু হাসিয়া বলিল, হাসলেন যে?
ষোড়শী কহিল, হাসচি―আগেকার দিনে ভৈরবীরা বিদেশী মানুষদের ভেড়া বানিয়ে রাখত। আচ্ছা, ভেড়া নিয়ে তারা কি করত? চরিয়ে বেড়াত, না লড়াই বাধিয়ে দিয়ে তামাশা দেখত। বলিতে বলিতেই সে একেবারে ছেলেমানুষের মত উচ্ছ্বসিত হইয়া হাসিতে লাগিল।
নির্মলের দেহ-মন পুলকে নৃত্য করিয়া উঠিল। এই কঠিন আবরণের নীচে যে
১২০