ঘরে, সেখানে ফকির সাহেব বসে আছেন, আপনাকে পরিচিত ক’রে দিই গে।
তিনি কবে এলেন?
কি জানি। বিকালবেলা ফিরে গিয়ে দেখি আমার ঘরের সম্মুখে দাঁড়িয়ে। আনন্দ আর রাখতে পারলাম না, প্রণাম করে নিয়ে গিয়ে আমার ঘরে বসালাম, সমস্ত ইতিহাস মন দিয়ে শুনলেন।
শনে কি বললেন?
শুধু একটু হাসলেন। বোধ হলো যেন সমস্তই জানতেন। কিন্তু নির্মলবাবু আপনি নাকি বলেচেন আমার মামলা-মকদ্দমার সমস্ত ভার নেবেন? একি সত্যি?
নির্মল ঘাড় নাড়িয়া কহিল, হাঁ সত্যি।
কিন্তু কেন নেবেন?
নির্মল একমুহূর্ত চুপ করিয়া থাকিয়া কহিল, বোধ করি আপনার প্রতি অন্যায় অত্যাচার হচ্চে বলেই।
কিন্তু আর কিছু বোধ করেন না ত? বলিয়াই ষোড়শী ফিক করিয়া হাসিয়া ফেলিয়া কহিল, থাক, সব কথার যে জবাব দিতেই হবে এমন কিছু শাস্ত্রে অনুশাসন নেই। বিশেষ করে এই কূট-কচালে শাস্ত্রের―না? আসুন, আমার ঘরে আসুন।
তাহার কুটীরে প্রবেশ করিয়া দেখিল ফকিরসাহেব নাই। কহিল, কোথায় গেছেন, বোধহয় এখনি ফিরে আসবেন। প্রদীপ স্তিমিত হইয়া আসিয়াছিল, উজ্জ্বল করিয়া দিয়া পাতা-আসনখানি দেখাইয়া দিয়া কহিল, বসুন। হাঙ্গামা, হৈচৈ, গণ্ডগোলের মাঝে এমন সময় পাইনে, যে বসে দুদণ্ড গল্প করি। আচ্ছা, মকদ্দমার যেন সকল ভারই নিলেন, কিন্তু যদি হারি, তখন ভার কে নেবে? তখন পেছুবেন না ত?
নির্মল জবাব দিতে পারিল না, তাহার কান পর্যন্ত রাঙ্গা হইয়া উঠিল। খানিকক্ষণ পরে কহিল, হারবার কোন সম্ভাবনা আমাদের নেই।
তা বটে। বলিয়া এবার একটুখানি যেন ষোড়শী বিমনা হইয়া পড়িল, কিন্তু পলকমাত্র। সহসা চকিত হইয়া প্রশ্ন করিল, ছেলে কেমন আছে নির্মলবাবু? কি করে তাকে ছেড়ে এলেন বলুন ত? আমি ত পারিনে।
অকস্মাৎ এই অসংলগ্ন প্রশ্নে নির্মল আশ্চর্য হইল। ষোড়শী একবার এ-দিকে একবার ও-দিকে বার দুই-তিন মাথা নাড়িয়া হাসিমুখে বলিল, আমি কিন্তু হৈম হলে এই-সমস্ত পরোপকার করা আপনার ঘুচিয়ে দিতাম। অত ভালমানুষ নই―আমার কাছে ফাঁকি চলত না―রাত্রিদিন চোখে চোখে রাখতাম।
ইঙ্গিত এত সুস্পষ্ট যে নির্মলের বুকের মধ্যেটা বিস্ময়ে, ভয়ে ও আনন্দে একই সঙ্গে ও একই কালে তরঙ্গিত হইয়া উঠিল। এবং সেই অসংবৃত অবসরে মুখ দিয়া তাহার বাহির হইয়া গেল, চোখে চোখে রাখলেই কি রাখা যায় ষোড়শী? এর বাঁধন যেখানে শুরু হয়, চোখের দৃষ্টি যে সেখানে পৌঁছায় না, একথা কি আজও জানতে তুমি পারোনি?
পেরেচি বৈ কি, বলিয়া ষোড়শী হাসিল। বাহিরে হঠাৎ একটা শব্দ শুনিয়া গলা
১২৯
দেঃ পাঃ―৯