পাতা:দেনা পাওনা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দিয়েচে।

 শিরোমণি বলিলেন, বেটী এখনও আছে, কিন্তু কখন যে কোথায় চলে যায় সে ত বলা যায় না।

 জীবানন্দ মহূর্তকাল বৃদ্ধের মুখপানে চাহিয়া থাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, কিন্তু সেজন্যে আপনাদের এত উদ্বেগ কেন?

 উত্তরের জন্য তিনি জনার্দনের প্রতি চাহিলেন। জনার্দন সাহস পাইয়া কহিলেন, দলিলপত্র, মূল্যবান তৈজসাদি, দেবীর অলঙ্কার প্রভৃতি যা কিছু আছে গ্রামের প্রাচীন ব্যক্তিরা সমস্তই জানেন। শিরোমণিমশায় বলছেন যে, ষোড়শী থাকতে থাকতেই সেগুলো সব মিলিয়ে দেখলে ভাল হয়। হয়ত―

 হয়ত নেই―এই না? কিন্তু না থাকলেই বা আপনারা আদায় করবেন কি করে?

 জনার্দন সহসা জবাব খুঁজিয়া পাইলেন না, শেষে বলিলেন, তবু ত জানা যাবে হুজুর।

 কিন্তু আজ আমার সময় নাই রায়মশাই।

 জনার্দন মনে মনে উল্লসিত হইয়া উঠিলেন, প্রায় এইপ্রকার ফন্দি করিয়াই তাঁহারা আসিয়া ছিলেন। শিরোমণি ব্যগ্র হইয়া কহিলেন, চাবিটা জনার্দন ভায়ার হাতে দিলে আজই সন্ধ্যার পূর্বে আমরা সমস্ত মিলিয়ে দেখতে পারি। হুজুরেরও আর কোন দায়িত্ব থাকে না,―কি আছে না আছে সে পালাবার আগেই সব জানা যায়। কি বল ভায়া? কি বল হে তোমরা? ঠিক না?

 সকলেই এ প্রস্তাবে সম্মতি দিল, দিল না কেবল যাহার হাতে চাবি। সে শুধু একটু ঈষৎ হাসিয়া কহিল, ব্যস্ত কি শিরোমণিমশায়, যদি কিছু নষ্ট হয়েই থাকে ত, ভিখিরীর কাছ থেকে আর আদায় হবে না। আপনারা আজ আসুন, আমার যেদিন অবসর হবে, মিলিয়ে দেখতে আপনাদের সকলকেই আমি সংবাদ দেব।

 ফন্দি খাটিল না দেখিয়া সবাই মনে মনে রাগ করিল। রায়মহাশয় উঠিয়া দাঁড়াইয়া কহিলেন, কিন্তু দায়িত্ব একটা―

 জীবানন্দ তৎক্ষণাৎ সায় দিয়া কহিলেন, সে ত ঠিক কথা রায়মশায়। দায়িত্ব একটা আমার রইল বৈ কি।

 দ্বারের বাহির হইয়াই শিরোমণি জনার্দনের গা টিপিয়া কহিলেন, দেখলে ভায়া, ব্যাটা মাতালের ভাব বোঝাই ভার। গুয়োটা কথা কয় যেন হেঁয়ালি। মদে চুর হয়ে আছে। বাঁচবে না বেশী দিন।

 জনার্দন শুধু বলিলেন, হুঁ। যা ভয় করা গেল, তাই হ’লো দেখছি।

 শিরোমণি কহিলেন, এবারে গেল সব শুঁড়ির দোকানে? বেটী যাবার সময় আচ্ছা জব্দ করে গেল।

 একজন কহিল, হুজুর চাবি আর দিচ্ছেন না।

 শিরোমণি উত্তেজিত হইয়া বলিলেন, আবার! এবার চাইতে গেলে গলা টিপে মদ

১৪০