মুখেই রহিয়া গেল―কিন্তু পরক্ষণেই যে সাহেব জামাইকে তিনি যথেষ্ট খাতির এবং ভয় করিতেন, তাহাকেই আনন্দের উৎকট প্রাবল্যে যা মুখে আসিল তাই বলিয়া তিরস্কার করিতে লাগিলেন।
সাহেব নিঃশব্দে উঠিয়া আসিয়া হাতের ভাঙ্গা ছড়িটা রাখিয়া দিলেন এবং পায়ের জুতা হাত দিয়া টানিয়া ফেলিয়া গায়ের ভিজে জামাটা খুলিয়া ফেলার মধ্যে ছোট-বড়, উচ্চ-নীচ, আত্মীয়-পর সকলে একযোগে ও নির্বিশেষে প্রশ্ন করিতে লাগিল, কি করিয়া এ দুরবস্থা ঘটিল এবং কোথায় ঘটিল?
রায়মহাশয় প্রকৃতিস্থ হইয়া কহিলেন, আচ্ছা, সে পরে হবে, তুমি বাড়ির ভেতরে যাও। মা হৈম, দাঁড়িয়ে থেকো না, একটা শুকনো কাপড়চোপড় দাও গে।
বাটীর মধ্যে শাশুড়ী ও সমবেত কুটুম্বিনীগণের প্রশ্নের উত্তরে নির্মল জানাইল, সে ওপারে ফকিরসাহেবের সহিত দেখা করিতে গিয়াছিল, কিন্তু সাক্ষাৎ হয় নাই, তিনি আশ্রমে নাই!
ওপারের নামে একপ্রকার আতঙ্কসূচক অস্ফুটধ্বনি উঠিল। রায়মহাশয় আশ্চর্য হইয়া বলিলেন, তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া! আমাকে বললে ত তাকে ডেকে পাঠাতে পারতাম। কিন্তু এই অন্ধকারে পথ চিনলে কি করে?
নির্মল কহিল, পথ চেনবার আমার দরকার হয়নি, হলে পারতাম না।
কিন্তু এলে কি করে?
একজন আমাকে হাত ধরে এনে বাড়ির সামনে দিয়ে গেছেন।
চতুর্দিকে প্রশ্ন উঠিল―কে? কে? কি নাম তার?
নির্মল একটুখানি স্থির থাকিয়া কহিল, কি―জানি, নামটা জানাতে হয়ত তাঁর আপত্তি আছে।
রায়মহাশয় প্রতিবাদ করিয়া কহিলেন, আপত্তি? কখ্খনো না, আমাদের দেশের লোককে তুমি চেনো না। কিন্তু যেই হোক তাকে খুশী করে দেওয়া চাই ত? বলিয়া চাকরটাকে তৎক্ষণাৎ ডাকিয়া হুকুম করিয়া দিলেন, অধর, চাটুয্যে যদি বাইরে থাকে, এখনি বলে দে কাল সকালেই খবর নিয়ে যেন বক্শিশ দেওয়া হয়। পুরো টাকাই যেন তার হাতে পড়ে―কেটে যেন কিছু না রাখে। চাটুয্যেটা আবার যে কৃপণ! বলিয়া তিনি ঔদার্যের আবেগে প্রথমে গৃহিণী ও পরে কন্যা-জামাতার মুখের প্রতি সদয় দৃষ্টিপাত করিলেন।
রাত্রে আহারাদির পর নিরালা ঘরের মধ্যে স্বামীকে একাকী পাইয়া হৈম কহিল, বাবা ত পুরস্কারের ঘোষণা করে দিলেন, পুরো টাকাটা দেবার চেষ্টাও হয়ত কিছু হবে, কিন্তু ফল হবে না।
নির্মল কহিল, না, আসামীকে পাওয়া যাবে না।
হৈম একটু হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, কিন্তু তুমি সেই দয়ালু লোকটিকে কি পুরস্কার দিলে?
নির্মল কহিল, দেওয়া জিনিসটা কি তুমি এতই সহজ মনে কর? ও কি কেবলমাত্র
৬০