কি এতবড় বিপদের দিনে মাকে লুকানো যায়? তোমার কোনো লজ্জা নাই, দেব্তা, কাশীতে চল।
দেবদাস মুখ ফিরাইয়া কহিল, না ধর্ম্মদাস, এ সময়ে তাঁর কাছে যেতে পারব না। ভাল হই, তার পরে।
ধর্ম্মদাস একবার মনে করিল, চন্দ্রমুখীর উল্লেখ করে; কিন্তু নিজে তাহাকে এত ঘৃণা করিত যে, তাহার মুখ মনে পড়িবামাত্রই চুপ করিয়া রহিল।
দেবদাসের নিজেরও অনেকবার এ কথা মনে হইত; কিন্তু কোনো কথা বলিতে ইচ্ছা করিত না। সুতরাং কেহই আসিল না। তার পরে অনেক দিনে সে ধীরে ধীরে আরোগ্য হইতে লাগিল। একদিন সে উঠিয়া বসিয়া বলিল, চল ধর্ম্মদাস, এইবার আর কোথাও যাই। বিপদের দিনে মাকে লুকানো যায়?
তোমার কোন লজ্জা নাই, দেব্তা, কাশীতে চল।
জিনিসপত্র বাঁধিয়া চুনিলালের নিকট বিদায় লইয়া, দেবদাস আবার এলাহাবাদে আসিয়া উপস্থিত হইল—শরীরটা অনেকটা ভাল। কিছুদিন থাকিবার পর একদিন দেবদাস কহিল, ধর্ম্ম, কোনো নূতন জায়গায় গেলে হয় না? কখনো বোম্বাই দেখিনি, যাবে?
আগ্রহ দেখিয়া অনিচ্ছাসত্ত্বেও ধর্ম্মদাস মত দিল। সময়টা জ্যৈষ্ঠ মাস, বোম্বাই শহর তেমন গরম নয়। এখানে আসিয়া দেবদাস অনেকটা সারিয়া উঠিল।
ধর্ম্মদাস জিজ্ঞাসা করিল, এখন বাড়ি গেলে হয় না?
দেবদাস কহিল, না, বেশ আছি। আমি এখানেই আর কিছুদিন থাকব।
এক বৎসর অতিবাহিত হইয়া গিয়াছে। ভাদ্র মাসের সকালবেলা, একদিন দেবদাস ধর্ম্মদাসের কাঁধে ভর দিয়া বোম্বাই হাসপাতাল হইতে বাহির হইয়া গাড়িতে আসিয়া বসিল। ধর্ম্মদাস কহিল, দেব্তা, আমি বলি, মায়ের কাছে যাওয়া ভাল।
দেবদাসের দু' চক্ষু জলে ভরিয়া গেল—আজ কয়দিন হইতে মাকে তাহার কেবল মনে পড়িতেছিল। হাসপাতালে পড়িয়া যখন তখন এই কথাই ভাবিয়াছে,—এ সংসারে তাহার সবই আছে, অথচ কেহই নাই। তাহার মা