এই সংবাদটা তাঁহাকে একেবারে অগ্নিমূর্তি করিয়া দিল। বলিলেন, দেবা বুঝি আবার তামাক খায়?
হ্যাঁ খায়, রোজ খায়। বাঁশবাগানে তার হুঁকো নুকোন আছে—
এতদিন আমাকে বলিসনি কেন?
দেবদাদা মারবে বলে।
কথাটা কিন্তু ঠিক তাই নহে। প্রকাশ করিলে দেবদাস পাছে শাস্তি ভোগ করে, এই ভয়ে সে কোন কথা বলে নাই। আজ কথাটা শুধু রাগের মাথায় বলিয়া দিয়াছে। এই তাহার সবে আট বৎসরমাত্র বয়স—রাগ এখন বড় বেশী; কিন্তু তাই বলিয়া তাহার বুদ্ধি-বিবেচনা নিতান্ত কম ছিল না। বাড়ি গিয়া বিছানায় শুইয়া অনেকক্ষণ কাঁদিয়া-কাটিয়া ঘুমাইয়া পড়িল,—সে রাত্রে ভাত পর্য্যন্ত খাইল না।
দুই
দেবদাসকে পরদিন খুব মারধর করা হইল,—সমস্তদিন ঘরে রুদ্ধ করিয়া রাখা হইল। তাহার পর, তাহার জননী যখন ভারী কান্নাকাটি করিতে লাগিলেন, তখন দেবদাসকে ছাড়িয়া দেওয়া হইল।পরদিন ভোরবেলায় সে পলাইয়া আসিয়া পার্ব্বতীর ঘরের জানালার নিকট দাঁড়াইল—ডাকিল, পারু! আবার ডাকিল, পারু!
পার্ব্বতী জানালা খুলিয়া কহিল, দেবদা!
দেবদাস ইশারা করিয়া বলিল, শিগগির আয়। দু'জনে একত্র হইলে দেবদাস বলিল, তামাক খাবার কথা বলে দিলি কেন?
তুমি মারলে কেন?
তুই জল আনতে গেলি না কেন?
পার্ব্বতী চুপ করিয়া রহিল।
দেবদাস বলিল, তুই বড় গাধা—আর যেন বলে দিসনে।
পার্ব্বতী মাথা নাড়িয়া বলিল, না।
তবে চল্, ছিপ কেটে আনি। আজ বাঁধে মাছ ধরতে হবে।