পাতা:দেবদাস - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেবদাস
১৯

ফিরিয়া আসিল। পরদিন সকালবেলাই দেবদাসের সহিত তাহার দেখা হইল। তার হাতে একটা লাটাই ছিল—তবে ঘুড়ি নাই, সেইটা কিনিতে হইবে। পার্ব্বতীকে কাছে পাইয়া কহিল, পারু, টাকা দে।

 পার্ব্বতীর মুখ শুকাইল,—বলিল, টাকা নেই!

 কি হ'ল?

 বোষ্টমীদের দিয়ে দিয়েচি। তারা গান গেয়েছিল।

 সব দিয়ে দিয়েচিস?

 সব। তিনটি টাকা তো ছিল।

 দূর গাধা, সব বুঝি দিতে হয়!

 বাঃ! তারা যে তিনজন ছিল! তিন টাকা না দিলে তিনজনের কি ভাগে মেলে?

 দেবদাস গম্ভীর হইয়া বলিল, আমি হলে দুই টাকা দিতুম, বলিয়া সে লাটাইয়ের বাঁট দিয়া মাটির উপর আঁচড় কাটিয়া কহিল, তা হলে তারা দশ আনা তের গণ্ডা এক কড়া এক ক্রান্তি করে ভাগে পেত।

 পার্ব্বতী ভাবিয়া কহিল, তারা কি তোমার মতো আঁক কষতে জানে?

 দেবদাস মণকষা পর্যন্ত পড়িয়াছিল; পার্ব্বতীর কথাটায় খুশী হইয়া কহিল, তা বটে!

 পার্ব্বতী দেবদাসের হাত ধরিয়া বলিল, আমি ভেবেছিলুম তুমি আমাকে মারবে, দেবদা।

 দেবদাস বিস্মিত হইল—মারব কেন?

 বোষ্টমীরা বলেছিল, তুমি আমাকে মারবে।

 কথা শুনিয়া দেবদাস মহা খুশী হইয়া পার্ব্বতীর কাঁধের উপর ভর দিয়া কহিল, দূর—না দোষ করলে কি আমি মারি?

 দেবদাস বোধ হয় মনে করিয়াছিল যে, পার্ব্বতীর এ কাজটা তাহার পিনাল কোডের ভিতরে পড়ে না; কেননা, তিন টাকা তিনজনে বেশ ভাগ করিয়া লইতে পারিয়াছে। বিশেষতঃ, যে বোষ্টমীরা পাঠশালায় মণকষা পর্যন্ত পড়ে নাই তাহাদিগকে তিন টাকার বদলে দুই টাকা দিলে, তাহাদের প্রতি কতকটা অত্যাচার করা হইত। তাহার পর সে পার্ব্বতীর হাত ধরিয়া ঘুড়ি কিনিবার জন্য ছোট বাজারের দিকে চলিল,—লাটাইটা সেইখানেই একটা ঝোপের মধ্যে লুকাইয়া রাখিয়া দিল।