পাতা:দেবদাস - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেবদাস
২৫

দ্বিজদাসের ছেলেবেলায় বিয়ে দিয়ে কি সর্বনাশটাই করলে। লেখাপড়া একেবারেই হলো না।

 পার্ব্বতীর ঠাকুরমা একেবারে অপ্রতিভ হইয়া পড়িলেন। তবুও কহিলেন, তা তো সব জানি বৌমা, কিন্তু কি জান—পারু, ষেটের বাছা একটু অমনি বেড়েচেও বটে, আর বাড়ন্ত গড়নও বটে, তাইতে—তাইতে—যদি নারাণের অমত—

 দেবদাসের জননী বাধা দিলেন; বলিলেন, না খুড়ী, এ কথা আমি তাঁকে বলতে পারব না। দেবদাসের এ-সময়ে বিয়ের কথা পাড়লে, তিনি কি আমার মুখ দেখবেন!

 কথাটা এইখানেই চাপা পড়িয়া গেল। কিন্তু স্ত্রীলোকের পেটে কথা থাকে না। দেবদাসের জননী কর্ত্তা র খাবার সময় কথাটা পাড়িয়া বলিলেন, পারুর ঠাকুমা আজ তার বিয়ের কথা পেড়েছিলেন।

 কর্ত্তা মুখ তুলিলেন; বলিলেন, হাঁ, পারুর বয়স হলো বটে; শীঘ্র বিবাহ দেওয়াই কর্ত্তব্য।

 তাইতে তো আজ কথা পেড়েছিলেন। বললেন, দেবদাসের সঙ্গে যদি—

 স্বামী ভ্রূ কুঞ্চিত করিলেন, তুমি কি বললে?

 আমি আর কি বলব! দু'জনের বড় ভাব; কিন্তু তাই বলে কি বেচা-কেনা, চক্রবর্তী-ঘরের মেয়ে আনতে পারি? তাতে আবার বাড়ির পাশে কুটুম্ব—ছি ছি!

 কর্ত্তা সন্তুষ্ট হইলেন; কহিলেন, ঠিক তাই। কুলের কি মুখ হাসাব? এ-সব কথায় কান দিও না।

 গৃহিণী শুষ্কহাসি হাসিয়া কহিলেন, না—আমি কান দিইনে; কিন্তু তুমিও যেন ভুলে যেয়ো না।

 কর্ত্তা গম্ভীরমুখে ভাতের গ্রাস তুলিয়া বলিলেন, তা হলে এত বড় জমিদারি কোন্‌কালে উড়ে যেত!

 জমিদারি তাঁহার চিরদিন থাকুক, তাহাতে আপত্তি নাই; কিন্তু পার্ব্বতীর দুঃখের কথাটা বলি। যখন এই প্রস্তাবটা নিতান্ত অগ্রাহ্য হইয়া নীলকণ্ঠের কানে গেল, তখন তিনি মাকে ডাকিয়া তিরস্কার করিয়া বলিলেন, মা, কেন এমন কথা বলতে গিয়েছিলে?