পাতা:দেবদাস - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেবদাস
৩১

 পার্ব্বতী ঘাড় নাড়িয়া বলিল, হাঁ, তাই।

 মনোরমা ভয়ানক আশ্চর্য হইয়া কহিল, বলিস কি পারু? তুই নিজে একথা জিজ্ঞাসা করবি?

 দোষ কি দিদি?

 মনোরমা একেবারে অবাক হইয়া গেল—বলিস কি রে? নিজে?

 নিজেই। নইলে আমার হয়ে আর কে জিজ্ঞাসা করবে দিদি?

 লজ্জা করবে না?

 লজ্জা কি? তোমাকে বলতে লজ্জা করলুম?

 আমি মেয়েমানুষ—তোর সই, কিন্তু সে যে পুরুষমানুষ পারু।

 এবার পার্ব্বতী হাসিয়া উঠিল; কহিল, তুমি সই, তুমি আপনার—কিন্তু তিনি কি পর? যে কথা তোমাকে বলতে পারি, সে কথা কি তাঁকে বলা যায় না?

 মনোরমা অবাক হইয়া মুখপানে চাহিয়া রহিল।

 পার্ব্বতী হাসিমুখে কহিল, মনোদিদি, তুই মিছামিছি মাথায় সিঁদুর পরিস। কাকে স্বামী বলে তাই জানিস নে। তিনি আমার স্বামী না হলে, আমার সমস্ত লজ্জা-শরমের অতীত না হলে, আমি এমন করে মরতে বসতুম না। তা ছাড়া দিদি, মানুষ যখন মরতে বসে, তখন সে কি ভেবে দেখে, বিষটা তেতো কি মিষ্টি! তাঁর কাছে আমার কোন লজ্জা নেই।

 মনোরমা মুখপানে চাহিয়া রহিল। কিছুক্ষণ পরে বলিল, তাঁকে কি বলবি? বলবি যে পায়ে স্থান দাও?

 পার্ব্বতী মাথা নাড়িয়া বলিল, ঠিক তাই বলবো দিদি।

 আর যদি সে স্থান না দেয়?

 এবার পার্ব্বতী বহুক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। তাহার পর কহিল, তখনকার কথা জানিনে দিদি।

 বাটী ফিরিবার সময় মনোরমা ভাবিল, ধন্য সাহস! ধন্য বুকের পাটা! আমি যদি মরেও যাই তো এমন কথা মুখে আনতে পারিনে।

 কথাটা সত্য। তাই তো পার্ব্বতী বলিয়াছিল, ইহারা অনর্থক মাথায় সিন্দূর পরে, হাতে নোয়া দেয়!