দেবদাস জিজ্ঞাসা করিল, কত নগদ টাকা আছে?
বাবার তবিলে দেড় লাখ টাকা জমা আছে। আমার বিবেচনায় হাজার-দশেক টাকা খরচ করলেই যথেষ্ট হবে—কি বল?
আমি কত পাব?
দ্বিজদাস একটু ইতস্ততঃ করিয়া বলিলেন, তা তুমিও অর্ধেক পাবে। দশ হাজার খরচ হলে, তোমার সত্তর হাজার ও আমার সত্তর হাজার থাকবে।
মা কি পাবেন?
মা নগদ টাকা কি করবেন? তিনি বাটীর গিন্নী—আমরা প্রতিপালন করব।
দেবদাস একটু চিন্তা করিয়া বলিল, আমার বিবেচনায়, আপনার ভাগের পাঁচ হাজার টাকা খরচ হোক এবং আমার ভাগের পঁচিশ হাজার টাকা খরচ হবে। বাকি পঞ্চাশ হাজারের মধ্যে আমি পঁচিশ হাজার নেব, বাকি পঁচিশ হাজার টাকা মায়ের নামে জমা থাকবে। আপনার কি বিবেচনা হয়?
প্রথমে দ্বিজদাস যেন লজ্জিত হইলেন; পরে কহিলেন, উত্তম কথা। কিন্তু আমার, কি জান,—স্ত্রী, পুত্র, কন্যা আছে; তাদের বিয়ে, পৈতা দেওয়া,—অনেক খরচ। তা এই পরামর্শই ভাল। একটু থামিয়া বলিলেন, তা একটু লিখে দিলেই—লেখাপড়ার প্রয়োজন হবে কি? কাজটা ভাল দেখাবে না। আমার ইচ্ছা, টাকাকড়ির কথা—এ সময়ে গোপনেই হয়।
তা ভাল কথা; কিন্তু কি জানো ভাই—
আচ্ছা, আমি লিখেই দিচ্চি। সেইদিনই দেবদাস লেখাপড়া করিয়া দিল।
পরদিন দ্বিপ্রহরে দেবদাস নীচে নামিতেছিল, সিঁড়ির পার্শ্বে পার্ব্বতীকে দেখিতে পাইয়া থমকিয়া দাঁড়াইল। পার্ব্বতী মুখপানে চাহিয়াছিল—চিনিতে যেন তাহার ক্লেশ হইতেছিল। দেবদাস গম্ভীর শান্তমুখে কাছে আসিয়া কহিল, কখন এলে পার্ব্বতী?
সেই কণ্ঠস্বর! আজ তিন বৎসর পরে দেখা। অধোমুখে পার্ব্বতী কহিল—সকালবেলা এসেচি।
অনেকদিন দেখা হয়নি। বেশ ভাল ছিলে?