পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বন দিয়া তটপন্থে পাঠাইলেন । যেখানে দেবীর বজরা থাকিবে, হরবল্লভ বলিয়া দিল ; সেইখানে তীরবর্তী বনমধ্যে ফৌজ তিনি লুকাইয় রাখিলেন, যদি দেবী ছিপের দ্বারা আক্রান্ত হইয়া তটপথে পলাইবার চেষ্টা করে, তবে তাহাকে এই ফৌজের দ্বারা ঘেরাও করিয়া ধরিবেন। আরও এক পলাইবার পথ ছিল—ছিপগুলি ভাটি দিয়া আসিবে, দূর হইতে ছিপ দেখিতে পাইলে দেৰী ভাটি দিয়া পলাইতে পারে, অতএব লেফটেনাণ্ট ব্রেনান অবশিষ্ট সিপাহীগুলিকে দুই ক্রোশ ভাটিতে পাঠাইলেন, তাহাদিগের থাকিবার জন্ত এমন একটি স্থান নির্দিষ্ট করিয়া দিলেন যে, সেখানে ত্রিস্রোতা নদী এই শুকার সময়ে সহজে হাটিয়া পার হওয়া যায়। সিপাহীরা সেখানে তীরে লুকাইয়া থাকিবে, বজরা দেখিলেই জলে আসিয়া তাহ ঘেরাও করিবে । সন্ন্যাসিনী রমণীকে ধরিবার জন্য এইরূপ ঘোরতর আড়ম্বর হইল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এ আড়ম্বর নিম্প্রয়োজন মনে করেন নাই। দেবী সন্ন্যাসিনী হউক আর নাই হউক, তাহার আজ্ঞাধীন হাজার যোদ্ধা আছে, সাহেবেরা জানিতেন। এই যোদ্ধাদিগের নাম “বরূকন্দাজ”। অনেক সময়ে কোম্পানীর সিপাহাদিগকে এই বরকন্দাজদিগের লাঠির চোটে পলাইতে হইয়াছিল, এইরূপ প্রবাদ । হায় লাঠি! তোমার দিন গিয়াছে! তুমি ছার বঁাশের বংশ বটে, কিন্তু শিক্ষিত হস্তে পড়িলে তুমি না পারিতে, এমন কাজ নাই। তুমি কত তরবারি দুই টুকরা করিয়া ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছ, কত ঢাল খাড়া খণ্ড খণ্ড করিয়া ফেলিয়াছ—হায়! বন্দুক আর সঙ্গীন তোমার প্রহারে যোদ্ধার হাত হইতে খসিয়া পড়িয়াছে। যোদ্ধা ভাঙ্গা হাত লইয়া পলাইয়াছে। লাঠি! তুমি বাঙ্গালায় আব্রু পর্দা রাখিতে, মান রাখিতে, ধান রাখিতে, ধন রাখিতে, জন রাখিতে, সবার মন রাখিতে। মুসলমান তোমার ভয়ে ত্রস্ত ছিল, ডাকাইত তোমার জ্বালায় ব্যস্ত ছিল, নীলকর তোমার ভয়ে নিরস্ত ছিল । তুমি তখনকার পীনাল কোড ছিলে—তুমি পীনাল কোডের মত ছষ্টের দমন করিতে, পীনাল কোডের মত শিষ্টেরও দমন করিতে এবং পীনাল কোডের মত রামের অপরাধে শু্যামের মাথা ভাঙ্গিতে । তবে পীনাল কোডের উপর তোমার এই সর্দারি ছিল যে, তোমার উপর আপীল চলিত না । হায়! এখন তোমার সে মহিমা গিয়াছে। পীনাল কোড তোমাকে তাড়াইয়া তোমার আসন গ্রহণ করিয়াছে —সমাজ-শাসন-ভার তোমার হাত হইতে তার হাতে গিয়াছে। তুমি, লাঠি! আর লাঠি নও বংশখণ্ড মাত্র। ছড়িৎ প্রাপ্ত হইয়া শৃগাল-কুকুর-ভীত বাবুর্গের হাতে শোভা কর; কুক্কুর ডাকিলেই সে ননীর হাতগুলি হইতে খসিয়া পড়। তোমার সে মহিমা আর নাই । শুনিতে পাই, সেকালে তুমি না কি উত্তম ঔষধ ছিলে—মানসিক ব্যাধির উত্তম চিকিৎসকদিগের