পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় খণ্ড—অষ্টম পরিচ্ছেদ । ১২৫ ঝড়ের বেগে পালভরা বজরা কাত্ত হইল, প্রায় ডুবে। লিখিতে এতক্ষণ লাগিল—কিন্তু এতখানা ঘটিল এক নিমেষ মধ্যে। সাহেব ব্রজেশ্বরের চড়ের প্রত্যুত্তরে ঘুষি উঠাইয়াছেন মাত্র, ইহারই মধ্যে এতখানা সব হইয়া গেল। র্তাহারও হাতের ঘুষি হাতে রহিল, যেমন বজরা কাত হইল, অমনি সাহেব টলিয়া মুষ্টিবদ্ধ-হস্তে দিবা সুন্দরীর পাদমূলে পতিত হইলেন। ব্ৰজেশ্বর খোদ সাহেবের ঘাড়ের উপর পড়িয়া গেল—এবং রঙ্গলাল তাহার উপর পড়িয়া গেল। হরবল্লভ প্রথমে নিশিঠাকুরাণীর ঘাড়ের উপর পড়িয়াছিলেন, পরে সেখান হইতে পদচ্যুত হইয়া গড়াইতে গড়াইতে রঙ্গরাজের নাগরা জুতায় আটকাইয়া গেলেন। তিনি মনে করিয়াছিলেন যে, “নৌকাখানা ডুবিয়া গিয়াছে, আমরা সকলে মরিয়া গিয়াছি, এখন আর দুর্গানাম জপিয়া কি হইবে।” ... --- কিন্তু নৌকা ডুবিল না—কাত হইয়া আবার সোজা হইয়া বাতাসে পিছন করিয়া বিদ্যুদ্বেগে ছুটিল। যাহারা পড়িয়া গিয়াছিল, তাহারা আবার খাড়া হইয়া দাড়াইল—সাহেব আবার ঘুষি তুলিলেন । কিন্তু সাহেবের ফৌজ, যাহারা জলে দাড়াইয়াছিল, বজরা তাহাদের ঘাড়ের উপর দিয়া চলিয়া গেল। অনেকে জলে ডুবিয়া প্রাণরক্ষা করিল ; কেহ नेत्र হইতে বজরা ঘুরিতেছে দেখিতে পাইয়া, পলাইয়া বাচিল ; কেহ বা আহত হইল ; কেহ মরিল না। ছিপগুলি বজরার নীচে পড়িয়া ডুবিয়া গেল—জল সেখানে এমন বেশী নহে—স্রোত বড় নাই— · সুতরাং সকলেই বাচিল । কিন্তু বজরা আর কেহ দেখিতে পাইল না। নক্ষত্ৰবেগে উড়িয়া বজরা কোথায় ঝড়ের সঙ্গে মিলিয়া চলিল, কেহ আর দেখিতে পাইল না । সিপাহী সেনা ছিন্ন ভিন্ন হইল । দেবী তাহাদের পরাস্ত করিয়া, পাল উড়াইয়া চলিল, লেফটেনাণ্ট, সাহেব ও হরবল্লভ দেবীর নিকট বন্দী হইল। নিমেষমধ্যে যুদ্ধ জয় হইল। দেবী তাই আকাশ দেখাইয়া বলিয়াছিল, “আমার রক্ষার উপায় ভগবান করিতেছেন।” অষ্টম পরিচ্ছেদ বজরা জলের রাশি ভাঙ্গিয়া, তুলিতে তুলিতে নক্ষত্র-বেগে ছুটিল। শব্দ ভয়ানক । বজরার মুখে কৃত্ত তরঙ্গরাশির গর্জন ভয়ানক—ঝড়ের শব্দ ভয়ানক। কিন্তু নৌকার গঠন অনুপম, নাবিকদিগের দক্ষতা ও শিক্ষা প্রসিদ্ধ। নৌকা এই ঝড়ের মুখে চারিখানা পাল দিয়া । নির্বিঘ্নে চলিল। আরোহিবৰ্গ যাহারা প্রথমে কুষ্মাণ্ডাকারে গড়াগড়ি দিয়াছিলেন, তাহারা সকলে স্বপদস্থ হইলেন। হরবল্লভ রায় মহাশয়, অঙ্গুষ্ঠে যজ্ঞোপবীত জড়িত করিয়া, দুর্গানাম জপিতে