বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:দেশের কাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[8]

 আমাদের মনে রাখতে হবে, যারা নিজেদের রক্ষা করতে পারে না, দেবতা তাদের সহায়তা করেন না।

দেবাঃ দুর্ব্বলঘাতকাঃ।

 দুর্ব্বলতা অপরাধ। কেননা, তা বহুল পরিমাণে আত্মকৃত, সম্পুর্ণ আকস্মিক নয়। দেবতা এই অপরাধ ক্ষমা করেন না। অনেক মার খেয়েচি, দেবতার কাছে এই শিক্ষার অপেক্ষায়। চৈতন্যের দুটি পন্থা আছে। এক হচ্চে মহাপুরুষদের মহাবাণী। তাঁরা মানবপ্রকৃতির গভীরতলে চৈতন্যকে উদ্বোধিত করে দেন। তখন বহুধা শক্তি সকল দিক থেকেই জেগে ওঠে, তখন সকল কাজই সহজ হয়। আবার দুঃখের দিনও শুভদিন। তখন বাহিরের উপর নির্ভরের মোহ দূর হয়, তখন নিজের মধ্যে নিজের পরিত্রাণ খুঁজতে প্রাণপণে উদ্যত হয়ে উঠি। একান্ত চেষ্টায় নিজের কাছে কী করে আনুকূল্য দাবি করতে হয় অন্য দেশে তার দৃষ্টান্ত দেখতে পাচ্চি।

 ইংলণ্ড আজ যখন দৈন্যের দ্বারা আক্রান্ত তখন সে ঘোষণ! করেচে, দেশের লোকে যথাসাধ্য নিজের উৎপন্ন দ্রব্যই নিজেরা ব্যবহার করবে। পথে পথে ঘরে ঘরে এই ঘোষণা যে, দেশজাত পণ্যদ্রব্যই আমাদের মুখ্য অবলম্বন। বহুদিনের বহু অন্নপুষ্ট জাতের মধ্যে যখনই বেকার সমস্য। উপস্থিত হল তখনই দেশের ধন নিরন্নদের বাঁচাতে লেগেচে। এর থেকে দেখা যায় সেখানে দেশের লোকের সকলের চেয়ে বড় সম্পদ দেশব্যাপী আত্মীয়তা। তাদের উপরে আনুকূল্য রয়েছে সদাজাগ্রত। তাতে মনের মধ্যে ভরসা হয়। আমরা বেকার হয়ে মরচি অথচ কেউ আমাদের খবর নেবে না, এ কোনোমতেই হতে পারে না, —এই তাদের দৃঢ় বিশ্বাস। এই বিশ্বাসে তাদের এত ভরসা। আমাদের ভরসা নেই। মারী, রোগ, দুর্ভিক্ষ, জাতিকে অবসন্ন করে দিয়েচে। কিন্তু প্রেমের সাধনা কই, সেবার উদ্যোগ কোথায়?