পাতা:ধর্ম্মজীবন (দ্বিতীয় খণ্ড) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( 0 ) ধৰ্ম্মজীবনের অপর লক্ষণ সকল প্ৰকাশ পায়। যে চিত্ত স্বাৰ্থ, সুখাসক্তি ও ভয়ের অতীত সে চিত্ত স্বভাবতঃ পবিত্র । সে চিত্ত সৰ্ব্বান্তঃকরণের সহিত সত্যকেই অনুসরণ করে এবং ঐকান্তিক নিষ্ঠার সাহিত ধৰ্ম্মের সেবা করিয়া থাকে। এইরূপ চিত্তই প্ৰকৃত ভাবে ন্যায়েয় অনুসরণ করিতে পারে। সত্যানুরাগ, ন্যায়পরতা, সংযম, সকলি স্বাভাবিক ভাবে ইহাতে প্ৰহ্মটত হইয়া থাকে। কেবল যে সুখাসক্তি ও ভয়ই আত্মার একমাত্র বন্ধন তাহা নহে, ধৰ্ম্মপথের যাত্রীদিগের পক্ষে আরও অনেক প্ৰকার বন্ধন আছে। এমন কি, শাস্ত্ৰ, গুরু ও বিধি, যাহা ধৰ্ম্ম-সাধনের সহায়তার জন্য নির্দিষ্ট হইয়াছে, তাহাও অনেক সময়ে বন্ধনের কাৰ্য্য করিয়া থাকে। যে ব্যক্তি সত্যকে সাক্ষাৎভাবে জানিস্বাছে তাহার পক্ষে ইহারা সহায়, কিন্তু যে ব্যক্তি তাহ জানে নাই, তাহার পক্ষে ইহারা বন্ধন-স্বরূপ । জগতে সকল বিদ্যা ও সকল জ্ঞানের পক্ষে নিয়ম এই যে, প্ৰত্যক্ষ জ্ঞান মুক্তি ও স্বাধীনতাকে আনিয়া দেয়, এবং পরোক্ষ জ্ঞান মানুষকে বন্ধনের মধ্যে রাখে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ মনে কর, বৰ্ত্তমান সময়ে বিজ্ঞান বিষয়ে অনেক তত্ত্ব আবিষ্কৃত হইয়াছে, বিজ্ঞানবিৎ পণ্ডিতগণ সে সমুদায়কে স্বীয় স্বীয় গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন। কেবল যে সেই তত্ত্বগুলিকে তঁাহারা গ্রন্থে নিবদ্ধ করিয়াছেন তাহা নহে, কিন্তু তাহাদের পরীক্ষার প্রণালী ও নির্দেশ করিয়া গিয়াছেন। তঁহাদের উদ্দেশ্য এই ছিল যে বিদ, থিগণ তাৎ তাৎ গ্রন্থের সাহায্যে নিজে নিজে পরীক্ষা করিবেন ও সাক্ষাৎভাবে প্ৰকৃতির সন্নিধানে উপস্থিত হইয়া জ্ঞানলাভ করিবেন। কিন্তু যদি কেহ আলস্ত বা ঔদাসীন্য বশতঃ প্রকৃতিকে সাক্ষাৎভাবে পরীক্ষা করিয়া না দেখে, তবে তাহাকে গ্ৰন্থ ও গুরুর উপরেই সৰ্ব্বদা নির্ভর করিতে হয় ; সৰ্ব্বদাই ভাবিতে হয়, এ বিষয়ে কোন গ্রন্থে কি বলিয়াছে, বা কোন জ্ঞানী কি নির্দেশ করিয়াছেন। সেইরূপ যে ব্যক্তি আপনার আত্ম-কোষে সেই জ্যোতির জ্যোতিকে দর্শন করিতে না পারে, তাহাকে অন্ধপ্ৰায় ধৰ্ম্মবোধে শাস্ত্ৰ, গুরু ও বিধির সেবাই করিতে হয়। তখন এগুলি তাহার পক্ষে মুক্তির সহায় না হইয়া বন্ধনের রজ্জ স্বরূপ হয় ; তখন সে জীবস্তু, 'তাজা, সুমিষ্ট পৰ্ম্ম হইতে বঞ্চিত থাকিয়া ধৰ্ম্মজীবনের বহিঃ