পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᎼᎼ☾ ধৰ্ম্মতত্ত্ব অপেক্ষ উচ্চবৃত্তি আর নাই। যেমন ঈশ্বরে এই জগৎ গ্রথিত রহিয়াছে প্রীতিতেও তেমনই জগৎ গ্রথিত রহিয়াছে। ঈশ্বরই প্রীতি, ঈশ্বরই ভক্তি,—বৃত্তি স্বরূপ জগদাধার হইয়া তিনি লোকের হৃদয়ে অবস্থান করেন। অজ্ঞানে আমাদিগকে ঈশ্বরকে জানিতে দেয় না এবং অজ্ঞানই আমাদিগকে ভক্তি প্রতি ভুলাইয়া রাখে। অতএব ভক্তি প্রীতির সম্যকৃ অনুশীলন জন্ত, জ্ঞানার্জনী বৃত্তি সকলের সম্যক অনুশীলন আবশ্বক। ফলে সকল বৃত্তির সম্যক অনুশীলন ও সামঞ্জস্য ব্যতীত সম্পূর্ণ ধৰ্ম্ম লাভ হয় না, ইহার প্রমাণ পুনঃপুনঃ পাইয়াছ । শিষ্য। এক্ষণে প্রতিবৃত্তির ভারতবর্ষীয় বা পারমার্থিক অনুশীলনপদ্ধতি বুঝিলাম । জ্ঞানের দ্বারা ঈশ্বরের স্বরূপ বুঝিয়া জগতের সঙ্গে র্তাহার এবং আমার অভিন্নত ক্রমে হৃদয়ঙ্গম করিতে হইবে । ক্রমে সৰ্ব্বলোককে আপনার মত দেখিতে শিখিলে প্রীতিবৃত্তির পূর্ণফুৰ্ত্তি হইবে। ইহার ফলও বুঝিলাম। আত্মপ্রতি ইহার বিরোধী হইবার সম্ভাবনা নাই—কেন না, সমস্ত জগৎ আত্মময় হইয়া যায়। অতএব ইহার ফল কেবল দেশবাৎসল্য মাত্র হইতে পারে না,—সৰ্ব্বলোক বাৎসল্যই ইহার ফল । প্রাকৃতিক অনুশীলনের ফল ইউরোপে কেবল দেশবাৎসল্য মাত্র জন্মিয়াছে—কিন্তু ভারতবর্ষে লোকবাৎসল্য জন্মিয়াছে কি ? গুরু । আজি কালির কথা ছাড়িয়া দাও । আজি কালি পাশ্চাত্য শিক্ষার জোর বড় বেশী হইয়াছে বলিয়া আমরা দেশবৎসল হইতেছি, লোকবৎসল আর নহি । এখন ভিন্ন জাতির উপর আমাদেরও বিদ্বেষ জন্মিতেছে। কিন্তু এত কাল তাহ ছিল না ; দেশবাৎসল্য জিনিসটা দেশে ছিল না। কথাটাও ছিল না। ভিন্ন জাতির প্রতি ভিন্ন ভাব ছিল না। হিন্দু রাজা ছিল, তার পর মুসলমান হইল, হিন্দু প্রজ। তাহাতে কথা কহিল না, হিন্দুর কাছে হিন্দু মুসলমান সমান। মুসলমানের পর ইংরেজ রাজা হইল, হিন্দুপ্রজা তাহাতে কথা কহিল না। বরং হিন্দুরাই ইংরেজকে ডাকিয়া রাজ্যে বসাইল। হিন্দু সিপাহি, ইংরেজের হইয়া লড়িয়া, হিন্দুর রাজ্য জয় করিয়া ইংরেজকে দিল। কেন না, হিন্দুর ইংরেজের উপর ভিন্ন জাতীয় বলিয়া কোন দ্বেষ নাই। আজিও ইংরেজের অধীন ভারতবর্ষ অত্যন্ত প্রভূভক্ত। ইংরেজ ইহার কারণ না বুঝিয় মনে করে হিন্দু ছৰ্ব্বল বলিয়া কৃত্রিম প্রভুভক্ত । শিষ্য। তা, সাধারণ হিন্দু প্রজা বা ইংরেজের সিপাহিরা যে বুঝিয়াছিল ঈশ্বর সৰ্ব্বভূতে আছেন, সকলই আমি, এ কথা ত বিশ্বাস হয় না।