বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যড় বিংশতিতম অধ্যায়।—দয়া । S8). যায়, তাহ রাজস দান। দেশ কাল পাত্র বিচারশূন্ত যে দান, অনাদরে এবং অবজ্ঞাযুক্ত যে দান, তাহা তামস দান।” 鷲, - শিষ্য। দানের দেশ কাল পাত্র কিরূপে বিচার করিতে হইবে, গীতায় তাহার কিছু উপদেশ আছে কি ? গুরু। গীতায় নাই, কিন্তু ভাষ্যকারের সে কথা বলিয়াছেন। ভাষ্যকারদিগের রহস্য দেখ। দেশ কাল পাত্র বিচার করিবে, এ কথাটার বাস্তবিক একটা বিশেষ ব্যাখ্যা প্রয়োজন করে না । সকল কৰ্ম্মই দেশ কাল পাত্র বিচার করিয়া করিতে হয়। দানও সেইরূপ। দেশ কাল পাত্র বিচার না করিয়া দান করিলে, দান আর সাত্ত্বিক হইল না, তামসিক হইল। কথাটার অর্থ সোজা বুঝিবার জন্য হিন্দুধর্মের কোন বিশেষবিধির প্রয়োজন করে না । বাঙ্গালী দেশ তুর্ভিক্ষে উৎসন্ন যাইতেছে, মনে কর সেই সময়ে মাঞ্চেষ্টরে কাপড়ের কল বন্ধ—শিল্পীদিগের কষ্ট হইয়াছে। এ অবস্থায় আমার কিছু দিবার থাকিলে, দুই জায়গায় কিছু কিছু দিতে পারিলে ভাল হয়, না পারিলে, কেবল বাঙ্গালায় যা পারি দিব । তাহ না দিয়া, যদি আমি সকলই মাঞ্চেষ্টরে দিই, তবে দেশ-বিচার হইল না । কেন না, মাঞ্চেষ্টরে দিবার অনেক লোক আছে, বাঙ্গালায় দিবার লোক বড় কম । কালবিচারও ঐরূপ। আজ যে ব্যক্তির প্রাণ তুমি আপনার প্রাণপাত করিয়া রক্ষা করিলে, কাল হয়ত তাহাকে তুমি রাজদণ্ডে দণ্ডিত করিতে বাধ্য হইবে, তখন সে প্রাণদান চাহিলে তুমি দিতে পারিবে না। পাত্রবিচার অতি সহজ—প্রায় সকলেই করিতে পারে। দুঃখীকে সকলেই দেয়, জুয়াচোরকে কেহই দিতে চাহে না । অতএব “দেশে কালে চ পাত্রে চ” এ কথার একটা সূক্ষ্ম ব্যাখ্যার বিশেষ প্রয়োজন নাই—যে উদার জাগতিক মহানীতি সকলের হৃদয়গত, ইহা তাহারই অন্তর্গত। এখন ভাষ্যকারের কি বলেন তাহ দেখ। “দেশে”— কি না “পুণ্যে কুরুক্ষেত্রাদে।” শঙ্করাচাৰ্য্য ও ঐধর স্বামী উভয়েই ইহা বলেন। তার পর “কালে কি ?” শঙ্কর বলেন, “সংক্রাস্ত্যাদেী”—ঞ্জীধর বলেন, “গ্রহণাদে।” পাত্রে কি ? শঙ্কর বলেন, “ষড়ঙ্গবিদ্বেদপারগ ইত্যাদেী আচারনিষ্ঠায়”—শ্ৰীধর বলেন, “পাত্রভূতায় তপব্ৰতাদিসম্পন্নায় ব্রাহ্মণায়।” সৰ্ব্বনাশ ! আমি যদি স্বদেশে বসিয়া মাসের ১লা হইতে ২৯শে তারিখের মধ্যে কোন দিনে, অতি দীনদুঃখী পীড়িত কাতর এক জন মুচি কি ডোমকে কিছু দান করি, তবে সে দান, ভগবদভিপ্রেত দান হইল না । এইরূপে কখন কখন ভাষ্যকারদিগের বিচারে অতি উন্নত, উদার এবং সাৰ্ব্বলৌকিক যে হিন্দুধৰ্ম্ম, তাহা অতি সঙ্কীর্ণ এবং অমুদার উপধৰ্ম্মে পরিণত হইয়াছে। এখানে শঙ্করাচাৰ্য্য ও জীধর ;