ইত্যাদি ঈশ্বরবাচক শব্দ, ঋগ্বেদের প্রাচীনতম মন্ত্রগুলিতে নাই—যেগুলি অপেক্ষাকৃত আধুনিক, সেইগুলিতে আছে। প্রাচীন সাংখ্যেরাও অনীশ্বরবাদী ছিলেন। অথচ উহার ধৰ্ম্মহীন নহেন, কেন না তাহার কৰ্ম্মফল মানিতেন, এবং মুক্তি বা নিঃশ্রেয়স কামনা করিতেন। বৌদ্ধধৰ্ম্মও নিরীশ্বর। অতএব ঈশ্বরবাদ ধর্শের লক্ষণ কি প্রকারে বলি ? দেখ, কিছুই পরিষ্কার হয় নাই । - ...' " শিষ্য। তবে বিদেশী তার্কিকদিগের ভাষা অবলম্বন করিতে হইল—লোকাতীত চৈতন্তে বিশ্বাসই ধৰ্ম্ম । গুরু । অর্থাৎ Supernaturalism, কিন্তু ইহাতে তুমি কোথায় আসিয়া পড়িলে দেখ । প্রেততত্ত্ববিদ সম্প্রদায় ছাড়া, আধুনিক বৈজ্ঞানিকদিগের মতে লোকাতীত চৈতন্তের কোন প্রমাণ নাই। সুতরাং ধৰ্ম্মও নাই—ধৰ্ম্মের প্রয়োজনও নাই। রিলিজনকে ধৰ্ম্ম বলিতেছি মনে থাকে যেন । শিষ্য । অথচ সে অর্থে ঘোর বৈজ্ঞানিকদিগের মধ্যেও ধৰ্ম্ম আছে। যথা Religion of Humanity. গুরু । সুতরাং লোকাতীত চৈতন্তে বিশ্বাস ধৰ্ম্ম নয় । শিষ্য। তবে আপনিই বলুন ধৰ্ম্ম কাহাকে বলিব। গুরু। প্রশ্নটা অতি প্রাচীন । “অথাতে ধৰ্ম্ম-জিজ্ঞাসা” মীমাংসা দর্শনের প্রথম সূত্র । এই প্রশ্নের উত্তর দানই মীমাংসা দর্শনের উদ্দেশ্য । সৰ্ব্বত্র গ্রাহ উত্তর আজ পৰ্য্যন্ত পাওয়া যায় নাই। আমি যে ইহার সদুত্তর দিতে সক্ষম হইব এমন সম্ভাবনা নাই । তবে পুৰ্ব্ব পণ্ডিতদিগের মত তোমাকে শুনাইতে পারি। প্রথম, মীমাংসাকারের উত্তর শুন । তিনি বলেন “নোদনীলক্ষণে ধৰ্ম্মঃ ।” নোদন, ক্রিয়ার প্রবর্তৃক বাক্য। শুধু এইটুকু থাকিলে বলা যাইত, কথাটা বুঝি নিতান্ত মন্দ নয় ; কিন্তু যখন উহার উপর কথা উঠিল, “নোদন প্রবর্তকে বেদবিধিরূপঃ” তখন আমার বড় সন্দেহ হইতেছে, তুমি উহাকে ধৰ্ম্ম বলিয়া স্বীকার করিবে কি না। শিষ্য। কখনই না। তাহ হইলে যতগুলি পৃথক ধৰ্ম্মগ্রন্থ ততগুলি পৃথক-প্রকৃতিসম্পন্ন ধৰ্ম্ম মানিতে হয়। খ্ৰীষ্টানে বলিতে পারে, বাইবেল বিধিই ধৰ্ম্ম ; মুসলমানও কোরাণ সম্বন্ধে ঐক্লপ বলিবে । ধৰ্ম্মপদ্ধতি ভিন্ন হউক ধৰ্ম্ম বলিয়া একটা সাধারণ সামগ্ৰী নাই কি ? Religions আছে বলিয়। Religion বলিয়া একটা সাধারণ সামগ্ৰী নাই কি ?
পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৬২
অবয়ব