Ֆt- ধৰ্ম্মতত্ত্ব শারীরিক ক্রিয়ায় সুদক্ষ হওয়া চাই। কৃষ্ণাৰ্জ্জুন আর স্ত্রীরাম লক্ষ্মণ ভিন্ন আর কেহ কখন এরূপ হুইয়াছিল কি না, তাহ শুনি নাই । গুরু। যাহার। মনুষ্যজাতির মধ্যে উৎকৃষ্ট, তাহার চেষ্টা করিলে যে সম্পূর্ণরূপে মমুন্ধত্ব লাভ করিতে পরিবে না, এমত কথা স্বীকার করা যায় না। আমার এমনও ভরসা আছে, যুগান্তরে যখন মনুষ্যজাতি প্রকৃত উন্নতি প্রাপ্ত হইবে, তখন অনেক মমুন্যই এই আদর্শামুযায়ী হইবে। সংস্কৃত গ্রন্থে প্রাচীন ভারতবর্ষের ক্ষত্রিয় রাজগণের যে বর্ণনা পাওয়া যায়, তাহাতে দেখা যায়, সেই রাজগণ সম্পূর্ণরূপে এই মনুষ্যত্ব প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। সে বর্ণনাগুলি যে অনেকটা লেখকদিগের কপোলকল্পিত, তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু এরূপ রাজগুণবর্ণনা যে স্থলে সাধারণ, সে স্থলে ইহাই অমুমেয় যে, এইরূপ একটা আদর্শ সে কালের ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়দিগের সম্মুখে ছিল। আমিও সেইরূপ আদর্শ তোমার সম্মুখে স্থাপন করিতেছি। যে যাহা হইতে চায়, তাহার সম্মুখে তাহার সর্বাঙ্গসম্পন্ন আদর্শ চাই । সে ঠিক আদর্শানুরূপ না হউক, তাহার নিকটবৰ্ত্তী হইবে । ষোল আন কি, তাহ না জানিলে আট আন পাইবার কেহ কামনা করে না। যে শিশু টাকায় ষোল আনা ইহা বুঝে না, সে টাকার মূল্য স্বরূপ চারিটি পয়সা লইয়া সন্তুষ্ট হইতে পারে। শিষ্য। এরূপ আদর্শ কোথায় পাইব । এরূপ মানুষ ত দেখি না। গুরু । মনুষ্য না দেখ, ঈশ্বর আছেন । ঈশ্বরই সৰ্ব্বগুণের মৰ্ব্বাঙ্গীণ ফুৰ্ত্তির ও চরম পরিণতির একমাত্র উদাহরণ। এই জন্য বেদাস্তের নিগুণ ঈশ্বরে, ধৰ্ম্ম সম্যক্ ধৰ্ম্মত্ব প্রাপ্ত হয় না, কেন না যিনি নিগুণ, তিনি আমাদের আদর্শ হইতে পারেন না। তাদ্বৈতবাদীদিগের “একমেবাছি ষ্টীয়ম" চৈতন্য অথবা যাহাকে হর্বট স্পেনসর “Inscrutable Power in Nature” বলিয়া ঈশ্বরস্থানে সংস্থাপিত করিয়াছেন—অর্থাৎ যিনি কেবল দার্শনিক বা বৈজ্ঞানিক ঈশ্বর, তাহার উপাসনায় ধৰ্ম্ম সম্পূর্ণ হয় না। আমাদের পুরাণেতিহাসে কথিত বা খ্ৰীষ্টিয়ানের ধৰ্ম্মপুস্তকে কথিত সগুণ ঈশ্বরের উপাসনাই ধৰ্ম্মের মূল, কেন না তিনিই আমাদের আদর্শ হইতে পারেন। যাহাকে “Impersonal God” বলি, তাহার উপাসন নিষ্ফল ; যাহাকে “Personal God” বলি, তাহার উপাসনাই সফল । শিষ্য। মানিলাম সগুণ ঈশ্বরকে আদর্শ স্বরূপ মানিতে হইবে। কিন্তু উপাসনার প্রয়োজন কি ? গুরু । ঈশ্বরকে আমরা দেখিতে পাই না। র্তাহীকে দেখিয়া দেখিয়া চলিব, সে সম্ভাবনা নাই। কেবল র্তাহাকে মনে ভাবিতে পারি। সেই ভাবাই উপাসনা। তবে
পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৬
অবয়ব