সপ্তম অধ্যায় –সীমঞ্জস্ত ও মুখ। স্বাস্থ্য, চক্ষের দৃষ্টি, শ্রবণের ক্ষত্তি—আমার ঈশ্বরে ভক্তি, মন্থন্তে ঐতি, দীনে দয়, সত্যে - অনুরাগ—আমার অপত্যে স্নেহ, শত্রুতে ক্রোধ,—আমার বৈজ্ঞানিক বুদ্ধি, দার্শনিক ধৃতি,— আমার কাব্যের কল্পনা, সাহিত্যের সমালোচনা—কোন দিকে কিছুর কোন বিঘ্ন হয় কি না । ইহাও কি সাধ্য ? গুরু । কঠিন বটে নিশ্চিত জানিও । ধৰ্ম্মাচরণ ছেলেখেলা নহে। ধৰ্ম্মাচরণ অতি হুরূহ ব্যাপার। প্রকৃত ধাৰ্ম্মিক যে পৃথিবীতে এত বিরল তাহার কারণই তাই। ধৰ্ম্ম সুখের উপায় বটে, কিন্তু সুখ বড় আয়াসলভ্য। সাধনা অতি দুরূহ। হুরূহ, কিন্তু অসাধ্য নহে । শিষ্য। কিন্তু ধৰ্ম্ম ত সৰ্ব্বসাধারণের উপযোগী হওয়া উচিত । গুরু। ধৰ্ম্ম, যদি তোমার আমার গড়িবার সামগ্ৰী হইত, ত না হয়, তুমি যাহাকে ১ সাধারণের উপযোগী বলিতেছ, সেইরূপ করিয়া গড়িতাম। ফরমায়েস মত জিনিস গড়িয়া দিতাম। কিন্তু ধৰ্ম্ম তোমার আমার গড়িবার নহে। ধৰ্ম্ম ঐশিক নিয়মাধীন। যিনি ধৰ্ম্মের প্রণেতা তিনি ইহাকে যেরূপ করিয়াছেন সেইরূপ আমাকে বুঝাইতে হইবে। তবে ধৰ্ম্মকে সাধারণের অনুপযোগীও বলা উচিত নহে। চেষ্টা করিলে, অর্থাৎ অনুশীলনের দ্বারা সকলেই ধাৰ্ম্মিক হইতে পারে। আমার বিশ্বাস যে এক সময়ে সকল মনুষ্যই ধাৰ্ম্মিক হইবে । যত দিন তাহা না হয়, তত দিন তাহারা অাদর্শের অনুসরণ করুক। আদর্শ সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছি, তাহা স্মরণ কর। তাহা হইলেই তোমার এ আপত্তি খণ্ডিত হইবে । শিষ্য । আমি যদি বলি যে আপনার ওরূপ একটা পারিভাষিক এবঞ্চ দুষ্প্রাপ্য সুখ মানি না, আমার ইন্দ্রিয়াদির পরিতৃপ্তিই মুখ ? গুরু । তাহ হইলে আমি বলিব, সুখের উপায় ধৰ্ম্ম নহে, মুখের উপায় অধৰ্ম্ম । শিষ্য । ইন্দ্রিয়-পরিতৃপ্তি কি মুখ নহে? ইহাও বৃত্তির ফুরণ ও চরিতার্থতা বটে। আমি ইন্দ্রিয়গণকে খৰ্ব্ব করিয়া, কেন দয়া দাক্ষিণ্যাদির সমধিক অনুশীলন করিব, আপনি তাহার উপযুক্ত কোন কারণ দেখান নাই। আপনি ইহা বুঝাইয়াছেন বটে যে, ইন্দ্রিয়াদির অধিক অনুশীলনে দয়া দাক্ষিণ্যাদির ধ্বংসের সম্ভাবনা—কিন্তু তদ্ভুত্তরে আমি যদি বলি যে ধ্বংস হউক, আমি ইন্দ্রিয়সুখে বঞ্চিত হই কেন ? গুরু। তাহা হইলে আমি বলিব, তুমি কিষ্কিন্ধ্য হইতে পথ ভুলিয়া আসিয়াছ । যাহা হউক, তোমার কথার অামি উত্তর দিব। ইন্দ্রিয়-পরিতৃপ্তি সুখ ? ভাল, তাই
পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৯
অবয়ব