সপ্তম অধ্যায় –সামঞ্জস্য ও সুখ। §4. গুরু । অস্ত্য প্রকার বিবেচনা করিবার কোন কারণ আমি অবগত নহি । কিন্তু এ কথার উত্তর জন্য দুই প্রকার বিচার আবশ্বক। যে জন্মান্তর মানে তাহার পক্ষে এক প্রকার, আর যে জন্মান্তর মানে না, তাহার পক্ষে আর এক প্রকার। তুমি কি জন্মান্তর মান ? শিষ্য । না । গুরু। তবে, আইস । যখন পরকাল স্বীকার করিলে অথচ জন্মান্তর মানিলে না, তখন ছুইটি কথা স্বীকার করিলে –প্রথম, এই শরীর থাকিবে না, সুতরাং শারীরিকী বৃত্তিনিচয়জনিত যে সকল সুখ দুঃখ তাহ পরকালে থাকিবে না। দ্বিতীয়, শরীর ব্যতিরিক্ত যাহা তাহ থাকিবে, অর্থাৎ ত্ৰিবিধ মানসিক বৃত্তিগুলি থাকিবে, সুতরাং মানসিক বৃত্তিজনিত যে সকল সুখ দুঃখ তাহ পরকালেও থাকিবে । পরকালে এইরূপ সুখের আধিক্যকে স্বর্গ বলা যাইতে পারে, এইরূপ দুঃখের আধিক্যকে নরক বলা যাইতে পারে। - শিষ্য। কিন্তু যদি পরকাল থাকে, তবে ইহা ধৰ্ম্মব্যাখ্যার অতি প্রধান উপাদান হওয়াই উচিত। তজ্জন্ত অন্যান্ত ধৰ্ম্মব্যাখ্যায় ইহাই প্রধানত্ব লাভ করিয়াছে। আপনি পরকাল মানিয়াও যে উহা ধৰ্ম্মব্যাখ্যায় বর্জিত করিয়াছেন, ইহাতে আপনার ব্যাখ্যা অসম্পূর্ণ ও ভ্রান্ত হইয়াছে বিবেচনা করি। গুরু। অসম্পূর্ণ হইতে পারে। সে কথাতেও কিছু সন্দেহ আছে। অসম্পূর্ণ হউক বা না হউক কিন্তু ভ্রান্ত নহে। কেন না সুখের উপায় যদি ধৰ্ম্ম হইল, আর ইহকালের যে সুখ, পরকালেও যদি সেই সুখই সুখ হইল, তবে ইহকালেরও যে ধৰ্ম্ম, পরকালেরও সেই ধৰ্ম্ম। পরকাল নাই মান, কেবল ইহকালকে সার করিয়াও সম্পূর্ণরূপে ধাৰ্ম্মিক হওয়া যায় । ধৰ্ম্ম নিত্য। ধৰ্ম্ম ইহকালেও সুখপ্রদ, পরকালেও সুখপ্রদ। তুমি পরকাল মান আর না মান—ধৰ্ম্মাচরণ করিও, তাহা হইলে ইহকালেও সুখী হইবে, পরকালেও সুখী হইবে। শিষ্য। আপনি নিজে পরকাল মানেন--কিছু প্রমাণ আছে বলিয়৷ মানেন, না, কেবল মানিতে ভাল লাগে তাই মানেন ? গুরু। যাহার প্রমাণাভাব, তাহা আমি মানি না । পরকালের প্রমাণ আছে বলিয়াই পরকাল মানি । শিষ্য। যদি পরকালের প্রমাণ আছে, যদি আপনি নিজে পরকালে বিশ্বাসী, তবে আমাকে তাহা মানিতে উপদেশ দিতেছেন না কেন ? আমাকে সে সকল প্রমাণ বুঝাইতেছেন না কেন ? w
পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৩
অবয়ব