পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম অধ্যায় –সামঞ্জস্য ও মুখ। ૭૧ “তত্ৰ তং বুদ্ধিসংযোগং লভতে পৌর্বদেহিকম্‌” ইত্যাদি। - গীত।। ৪৩ ৷ ৬ ৷ শিষ্য। এক্ষণে আমরা স্থূল কথা হইতে অনেক দূরে আসিয়া পড়িয়াছি। কথাটা হইতেছিল, স্থায়ী সুখ কি ? তাহার প্রথম উত্তরে আপনি বলিয়াছেন যে, ইহকালে ও পরকালে চিরস্থায়ী যে সুখ, তাহাই স্থায়ী সুখ। ইহার দ্বিতীয় উত্তর আছে বলিয়াছেন। দ্বিতীয় উত্তর কি ? গুরু । দ্বিতীয় উত্তর যাহার। পরকাল মানে না, তাহাদের জন্য । ইহজীবনই যদি সব হইল, মৃত্যুই যদি জীবনের অন্ত হইল, তাহ হইলে, যে সুখ সেই অস্তকাল পর্য্যন্ত থাকিবে, তাহাই স্থায়ী সুখ । যদি পরকাল না থাকে, তবে ইহজীবনে যাহা চিরকাল থাকে তাহাই স্থায়ী সুখ । তুমি বলিতেছিলে, পাচ সাত দশ বৎসর ধরিয়া কেহ কেহ ইন্দ্রিয়সুখে নিমগ্ন থাকে । কিন্তু পাচ সাত দশ বৎসর কিছু চিরজীবন নহে। যে পাচ সাত দশ বৎসর ধরিয়া ইন্দ্রিয় পরিতপণে নিযুক্ত আছে, তাহারও মৃত্যুকাল পর্য্যন্ত সে মুখ থাকিবে না। তিনটির একটি না একটি কারণে অবশ্ব অবশু, তাহার সে সুখের স্বপ্ন ভাঙ্গিয়৷ যাইবে । (১) অতিভোগজনিত গ্লানি বা বিরাগ—অতিতৃপ্তি ; কিম্বা (২) ইন্দ্রিয়াসক্তিজনিত অবশ্বাস্তাবী রোগ বা অসামর্থ্য ; অথবা (৩) বয়োবৃদ্ধি। অতএব এ সকল সুখের ক্ষণিকত্ব আছেই আছে । শিষ্য । আর যে সকল বৃত্তিগুলিকে উৎকৃষ্ট বৃত্তি বলা যায়, সেগুলির অনুশীলনে যে সুখ, তাহা কি ইহজীবনে চিরস্থায়ী ? গুরু। তদ্বিষয়ে অণুমাত্র সন্দেহ নাই। একটা সামান্ত উদাহরণের দ্বারা বুঝাইব । মনে কর, দয়া বৃত্তির কথা হইতেছে। পরোপকারে ইহার অনুশীলন ও চরিতার্থতা। এ বৃত্তির দোষ এই যে, যে ইহার অনুশীলন আরম্ভ করে নাই, সে ইহার অনুশীলনের সুখ বিশেষরূপে অনুভব করিতে পারে না। কিন্তু ইহা যে অনুশীলিত করিয়াছে, সে জানে দয়ার অনুশীলন ও চরিতার্থতায়, অর্থাৎ পরোপকারে, এমন তীব্র সুখ আছে যে, নিকৃষ্ট শ্রেণীর ঐন্দ্রিয়িকেরা সৰ্ব্বলোকসুন্দরীগণের সমাগমেও সেরূপ তীব্র মুখ অনুভূত করিতে পারে না । এ বৃত্তি যত অনুশীলিত করিবে, ততই ইহার সুখজনকতা বাড়িবে। নিকৃষ্ট বৃত্তির ন্যায়, ইহাতে গ্লানি জন্মে না, অতিতৃপ্তিজনিত বিরাগ জন্মে না, বৃত্তির অসামর্থ্য বা দৌৰ্ব্বল্য জন্মে না, বল ও সামর্থ্য বরং বাড়িতে থাকে। ইহার নিয়ত অমুশীলন পক্ষে কোন ব্যাঘাত নাই। ঔদরিক দিবসে ছুই বার, তিন বার, না হয় চারি বার আহার করিতে