বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম অধ্যায় –সামঞ্জস্য ও মুখ । Vడిపి পরলোকে জীবনের অবস্থা স্বতন্ত্র । অতএব প্রয়োজনও স্বতন্ত্র । ইন্দ্রিয়ের প্রয়োজন না হওয়াই সম্ভব । শিস্য। হইলে হইতে পারে। কিন্তু এ সকল আন্দাজি কথা। আন্দাজি কথার প্রয়োজন নাই । o, গুরু । আন্দাজি কথা ইহা অামি স্বীকার করি । বিশ্বাস করা, না করার পক্ষে তোমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে, ইহাও আমি স্বীকার করি। আমি যে দেখিয়া আসি নাই, ইহা বোধ করি বলা বাহুল্য। কিন্তু এ সকল আন্দাজি কথার একটু মূল্য আছে । যদি পরকাল থাকে, আর যদি Law of Continuity অর্থাৎ মানসিক অবস্থার ক্রমাম্বয় ভাব সত্য হয়, তবে পরকাল সম্বন্ধে যে অন্ত কোনরূপ সিদ্ধান্ত করিতে পার, আমি এমন পথ দেখিতেছি না। এই ক্রমান্বয় ভাবটির প্রতি বিশেষ মনোযোগ করিবে। হিন্দু, খৃষ্টীয়, বা ইসলামী যে স্বৰ্গনরক, তাহ এই নিয়মের বিরুদ্ধ। শিষ্য। যদি পরকাল মানিতে পারি তবে এটুকুও না হয় মানিয়া লইব । যদি হাতীট। গিলিতে পারি, তবে হাতীর কাণের ভিতর যে মশাট চুকিয়াছে, তাহা গলায় বাধিবে না। কিন্তু জিজ্ঞাসা করি, এ পরকালের শাসনকর্তৃত্ব কই ? গুরু। যাহার স্বর্গের দণ্ডধর গড়িয়াছে, তাহারা পরকালের শাসনকর্তা গড়িয়ছে । আমি কিছুই গড়িতে বসি নাই। আমি মনুষ্যজীবনের সমালোচনা করিয়া, ধর্মের যে স্থল মৰ্ম্ম বুঝিয়াছি, তাহাই তোমাকে বুঝাইতেছি। কিন্তু একটা কথা বলিয়া রাখায় ক্ষতি নাই। যে পাঠশালায় পড়িয়াছে, সে যে দিন পাঠশালা ছাড়িল, সেই দিনই একটা মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিতে পরিণত হইল না। কিন্তু সে কালক্রমে একটা মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিতে পরিণত হইতে পারে, এমত সম্ভাবনা রহিল। আর যে একেবারে পাঠশালায় পড়ে নাই, জন ষ্টুয়ার্ট মিলের মত পৈতৃক পাঠশালাতেও পড়ে নাই, তাহার পণ্ডিত হইবার কোন সম্ভাবনা নাই । ইহলোককে অামি তেমনি একটি পাঠশালা মনে করি। যে এখান হইতে সদ্ধৃত্তিগুলি মার্জিত ও অনুশীলিত করিয়া লইয়া যাইবে, তাহার সেই বৃত্তিগুলি ইহলোকের কল্পনাতীত ফুৰ্ত্তি প্রাপ্ত হইয়। সেখানে তাহার অনন্ত স্বখের কারণ হইবে, এমন সম্ভব। আর যে সস্থত্তিগুলির অনুশীলন অভাবে অপকাবস্থায় পরলোকে লইয়া যাইবে, তাহার পরলোকে কোন মুখেরই সস্তাবনা নাই। আর যে কেবল অসন্থত্তিগুলি ফুরিত করিয়া পরলোকে যাইবে, তাহার অনন্ত দুঃখ । জন্মান্তর যদি না মানা যায়, তবে এইরূপ স্বর্গ নরক মানা যায়। কৃমি-কীট-সস্কুল অবর্ণনীয় হ্রদরূপ নরক বা অপরোকণ্ঠ-নিনাদ-মধুরিত, o