পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলি যাহার জ্ঞান ঈশ্বরে, কৰ্ম্ম ঈশ্বরে, আনন্দ ঈশ্বরে, এবং শরীরাপণ ঈশ্বরে, তাহারই ঈশ্বরে ভক্তি হইয়াছে। অথবা—ঈশ্বরসম্বন্ধিনী ভক্তির উপযুক্ত ফুৰ্ত্তি ও পরিণতি হইয়াছে। . . শিষ্ট । এ কথার প্রতি আমার প্রথম আপত্তি এই যে, আপনি এ পর্ষ্যস্ত ভক্তি অশ্বাস্ত বৃত্তির মধ্যে একটি বৃত্তি বলিয়া বুঝাইয়া আসিয়াছেন, কিন্তু এখন সকল বৃত্তির সমষ্টিকে ভক্তি বলিতেছেন। গুরু। তাহা নহে। ভক্তি একই বৃত্তি। আমার কথার তাৎপৰ্য্য এই যে, যখন সকল বৃত্তিগুলিই এই এক ভক্তিবৃত্তির অনুগামী হইবে, তখনই ভক্তির উপযুক্ত ফুৰ্ত্তি হইল। এই কথার দ্বার, বৃত্তিমধ্যে ভক্তির যে শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলিয়াছিলাম, তাহাই সমর্থিত হইল । ভক্তি ঈশ্বরাপিত হইলে, আর সকল বৃত্তিগুলি উহার অধীন হইবে, উহার প্রদর্শিত পথে যাইবে, ইহাই আমার কথার স্থূল তাৎপৰ্য্য। এমন তাৎপৰ্য্য নহে যে, সকল বৃত্তির সমষ্টি ভক্তি । . শিষ্য। কিন্তু তাহা হইলে সামঞ্জস্য কোথা গেল ? আপনি বলিয়াছেন যে, সকল বৃত্তিগুলির সমুচিত ফুৰ্ত্তিই মনুষ্যত্ব। সেই সমুচিত ফুৰ্ত্তির এই অর্থ করিয়াছেন যে, কোন বৃত্তির সমধিক ক্ষুৰ্ত্তির স্বার। অন্য বৃত্তির সমুচিত ক্ষুৰ্ত্তির অবরোধ না হয়। কিন্তু সকল বৃত্তিই যদি এই এক ভক্তিবৃত্তির অধীন হইল, ভক্তিই যদি অন্ত বৃত্তিগুলিকে শাসিত করিতে লাগিল, তবে পরস্পরের সামঞ্জস্য কোথায় রহিল ? 4. গুরু । ভক্তির অঙ্কুবৰ্ত্তিত কোন বৃত্তিরই চরম ফুৰ্ত্তির বিস্ত্র করে না । মনুষ্যের বৃত্তি মাত্রেরই যে কিছু উদ্দেশ্য হইতে পারে, তন্মধ্যে সৰ্ব্বাপেক্ষা ঈশ্বরই মহৎ । যে বৃত্তির যত সম্প্রসারণ হউক না কেন, ঈশ্বরানুবৰ্ত্তী হইলে, সে সম্প্রসারণ বাড়িবে বৈ কমিবে না। ঈশ্বর যে বৃত্তির উদ্দেশু,—অনন্ত মঙ্গল, অনন্ত জ্ঞান, অনন্ত ধৰ্ম্ম, অনন্ত সৌন্দৰ্য্য, অনন্ত শক্তি, অনন্তই যে বৃত্তির উদ্দেশু,—তাহার আবার অবরোধ কোথায় ? ভক্তিশাসিতাবস্থাই সকল বৃত্তির যথার্থ সামঞ্জস্য । শিষ্য। তধে আপনি যে মনুষ্যত্ব-তত্ত্ব এবং অনুশীলনধৰ্ম্ম আমাকে শিখাইতেছেন, তাহার স্থল তাৎপৰ্য্য কি এই যে, ঈশ্বরে ভক্তিই পূর্ণ মনুষ্যত্ব, এবং অনুশীলনের একমাত্র উদেখ সেই ঈশ্বরে ভক্তি ? - - গুরু । অনুশীলনধৰ্ম্মের মৰ্ম্মে এই কথা আছে বটে যে, সকল বৃত্তির ঈশ্বরে সমর্পণ ব্যতীত মনুষ্যত্ব নাই । ইহাই প্রকৃত কৃষ্ণাপণ, ইহাই প্রকৃত নিষ্কাম ধৰ্ম্ম । ইহাই স্থায়ী সুখ । ইহারই নামান্তর চিত্তশুদ্ধি। ইহারই লক্ষণ “ভক্তি, খ্ৰীতি, শাস্তি।” ইহাই ধৰ্ম্ম