তাহা হইলে শ্লোকের অর্থ হইল এই যে, যে ঈশ্বরার্থ বা ঈশ্বরোষ্টি যে কৰ্ম্ম তদ্ভিন্ন অঙ্গ । কৰ্ম্ম বন্ধনমাত্র (অঙ্গুষ্ঠেয় নহে); অতএব কেবল ঈশ্বরোষ্টি কৰ্ম্মই করিবে। ইহার ফল দাড়ায় কি ? দাড়ায়, যে সমস্ত বৃত্তিগুলিই ঈশ্বরমুখী করিবে, নহিলে সকল কৰ্ম্ম ঈশ্বরোদিষ্ট । কৰ্ম্ম হইবে না। এই নিষ্কাম ধৰ্ম্মই নামান্তরে ভক্তি। এইরূপে কৰ্ম্ম ও ভক্তির সামঞ্জস্য । কর্মের সহিত ভক্তির ঐক্য স্থানান্তরে আরও স্পষ্টীকৃত হইতেছে। যথা— ময়ি সৰ্ব্বাণি কৰ্ম্মাণি সংস্থাস্থ্যাধ্যাত্মচেতসা নিরাশী নিৰ্ম্মমোস্তৃত্বা যুধ্যস্ব বিগতজর । অর্থাৎ বিবেক বুদ্ধিতে কৰ্ম্ম সকল আমাতে অর্পণ করিয়া নিষ্কাম হইয়া এবং মমতা ও বিষ্কারশূন্ত হইয়া যুদ্ধে প্রবৃত্ত হও । শিষ্য। ঈশ্বরে কৰ্ম্ম অৰ্পণ কি প্রকারে হইতে পারে ? গুরু। “অধ্যাত্মচেতসা” এই বাক্যের সঙ্গে “সংন্যস্ত” শব্দ বুঝিতে হইবে। ভগবান শঙ্করাচাৰ্য্য “অধ্যাত্মচেতসা” শব্দের ব্যাখ্যায় লিখিয়াছেন, “অহং কর্ভেশ্বরীয় ভূতাবৎ করোমীত্যনয়। বুদ্ধ্যা।” “কৰ্ত্ত যিনি ঈশ্বর, তাহারই জন্য, তাহার ভূত্যস্বরূপ এই কাজ করিতেছি।” এইরূপ বিবেচনায় কাজ করিলে, কৃষ্ণে কৰ্ম্মাপণ হইল । এখন এই কৰ্ম্মযোগ বুঝিলে ? প্রথমতঃ কৰ্ম্ম অবশ্ব কৰ্ত্তব্য। কিন্তু কেবল অমুষ্ঠেয় কৰ্ম্মই কৰ্ম্ম । যে কৰ্ম্ম ঈশ্বরোদ্দিষ্ট, অর্থাৎ ঈশ্বরাভিপ্রেত, তাহাই অনুষ্ঠেয়। তাহাতে আসক্তিশূন্ত এবং ফলাকাঙ্ক্ষাশূন্ত হইয়া তাহার অনুষ্ঠান করিতে হইবে। সিদ্ধি অসিদ্ধি তুল্য জ্ঞান করিবে। কৰ্ম্ম ঈশ্বরে অর্পণ করিবে অর্থাৎ কৰ্ম্ম তাহার, আমি তাহার ভূত্য স্বরূপ কৰ্ম্ম করিতেছি, এইরূপ বুদ্ধিতে কৰ্ম্ম করিবে তাহা হইলেই কৰ্ম্মযোগ সিদ্ধ হইল। ইহা করিতে গেলে কাৰ্য্যকারিণী ও শারীরিক বৃত্তি সকলকেই ঈশ্বরমুখী করিতে হইবে। অতএব কৰ্ম্মযোগই ভক্তিযোগ। ভক্তির সঙ্গে ইহার ঐক্য ও সামঞ্জস্য দেখিলে। এই অপুৰ্ব্ব তত্ত্ব, অপুৰ্ব্ব ধৰ্ম্ম, কেবল গীতাতেই আছে। এরূপ আশ্চৰ্য্য ধৰ্ম্মব্যাখ্য। আর কখন কোন দেশে হয় নাই। কিন্তু ইহার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা তুমি এখন প্রাপ্ত হও নাই। কৰ্ম্মযোগেই ধৰ্ম্ম সম্পূর্ণ হইল না, কৰ্ম্ম ধর্মের প্রথম সোপান মাত্র। কাল তোমাকে জ্ঞানযোগের কথা কিছু বলিব । -
পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮৮
অবয়ব