9 নববিধান কোন অভাব ছিল না, কিন্তু বাহিরে সাংসারিক আচরণে বাদপ্ৰতিবাদের ঘাত-প্ৰতিঘাত প্ৰায়ই প্ৰকাশ হইয়া পড়িত। লোকের সম্মুখে বিভা তর্কে কিছুতেই হার মানিতে পারিত না, ইহা তাহার স্বভাব। এই হেতু প্ৰায়ই দেখা যাইত, এই বস্তুটা পাছে কথায় কথায় বাড়াবাড়িতে গিয়া উপনীত হয়, এই ভয়ে প্রায়ই ক্ষেত্ৰমোহন বিতণ্ডার মাঝখানেই রণে ভঙ্গ দিয়া সরিয়া পড়িতেন । কিন্তু আজি তঁহার সে ভাব নয়, ইহা ক্ষণকালের জন্য অনুভব করিয়া বিভা আপনাকে সম্বরণ করিল। বস্তুতঃই তাহার বিরুদ্ধে আজ ক্ষেত্রমোহনের মনের মধ্যে এতটুকু প্রশ্রয়ের ভাব ছিল না। পরের দোষ ধরিয়া কটু-কথা বলা বিভার একপ্রকার স্বভাবের মধ্যে গিয়া দাড়াইয়াছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হয়ত ইহাতে অশিষ্টতা ভিন্ন আর কোন ক্ষতিই হইত না ; কিন্তু এই যে নিরপরাধ বাধুটির বিরুদ্ধে প্রথম দিন হইতেই সে একেবারে কোমর বঁাধিয়া লাগিয়াছে, বিনাদোষে অশেষ দুঃখভোগের পর, যে স্ত্রী স্বামীর গৃহকোণে দৈবাৎ স্থান লাভ করিয়াছে, তাহার সেইটুকু স্থান হইতে তাহাকে ভ্ৰষ্ট করিবার দুরভিসন্ধি, আর একজন স্বামীর চিত্ত দুঃখ ও বিরক্তিতে পূর্ণ করিয়া আনিতেছিল। অথচ ইহারই পদধূলির যোগ্যতাও অপরের নাই, এই সত্য চক্ষের পলকে উপলব্ধি করিয়া ক্ষেত্ৰমোহনের তিক্ত ব্যথিত চিত্তে বিভার বিরুদ্ধে আর কোন ক্ষমা রহিল না । অথচ এই কথা প্ৰকাশ করিয়া বলাও এই উচ্চশিক্ষিত সম্প্রদায়ে তেমনি সুকঠিন। বরঞ্চ যেমন করিয়া হৌক সভ্যতার আবরণে বাহিরে ইহাকে গোপন করিতেই হইবে। ক্ষেত্রমোহন ভগিনীকে উদ্দেশ করিয়া কহিলেন, উমা, তোমার এই পল্লীগ্রামের বৌদিদির কাছে এসে যদি রোজ দুপুরবেলা বসতে পারে, যে-কোন সংসারেই পড় না কেন দিদি, দুঃখ পাবে না। তা বলে রাখচি । উমা হাসিমুখে চুপ করিয়া রহিল। উষা মুখ না তুলিয়া বলিল,
পাতা:নববিধান - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৬
অবয়ব